কেন কিছু মানুষ আজগুবি আওয়াজ শুনতে পায়?

বাস্তবের আমাদের উপলব্ধি সবসময় নিখুঁত নয়। শুধু ভাবুন কিভাবে আমাদের মস্তিষ্ক দৃষ্টি ভ্রমের (অপটিক্যাল ইল্যুশন)  প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু কেন কিছু মানুষ শ্রবণ হ্যালুসিনেশন অনুভব করে ও তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের মাথার মধ্যে আওয়াজ বাজতেই থাকে, আর কেনই বা অন্যরা শুনতে পায় না?

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী এ. আর. পাওয়ার ও তার সহকর্মীরা এসবের উত্তরের ব্যাখ্যা খোঁজেন। সম্প্রতি ‘বিজ্ঞান’এ প্রকাশিত হওয়া গবেষণায় তারা ব্যাখ্যা করেন কিছু মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তৈরিকৃত প্রত্যাশা ও সংশ্লেষ দ্বারা কিভাবে ‘অত্যাধিক প্রভাবিত’ হয়, এবং এটা তাদের শ্রবণ হ্যালুসিনেশনের দিকে আরো আকৃষ্ট করে তোলে।

শ্রবণ হ্যালুসিনেশন প্রবৃত্ত করতে প্যাভলোভিয়ান কন্ডিশনিং নামে গবেষকগণ একটা কৌশল ব্যবহার করেন। যখন একে অপরের সাথে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে তখন দুইজনের মধ্যে সংশ্লেষ তৈরি করে। মূল পরীক্ষায় প্যাভলোভ (ইভান পেট্রোভিক প্যাভলোভ-১৯০৪ সালে চিকিৎসায় নভেল পুরুষ্কার পান) খাবারের সাথে একটি বেল বাজিয়ে কুকুরদের প্রশিক্ষণ দিতেন। এখানে পাওয়ারস ও তার সহকর্মীগণ একটা চেকারবোর্ড ও একটা টোন(কন্ঠস্বর) ব্যবহার করে।

গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের চোখে (এবং কান) দুটি উদ্দীপকের মধ্যে একটি সংশ্লেষ তৈরি করার জন্য একইসাথে টোন বাজায় এবং চেকারবোর্ড প্রদর্শন করে। তারা টোনের তীব্রতা সামঞ্জস্য করার জন্য এই কাজটি কয়েকবার করে। কখনও কখনও তারা টোন বাজায় না এবং চেকারবোর্ড প্রদর্শন করে। পরীক্ষা চলাকালে বেশিরভাগ বলে শ্রবণ হ্যালুসিনেশনের (যেমন তারা একটি অস্তিত্বহীন স্বর(টোন) শুনেছে বলে দাবি করে) কথা, কিন্তু কেউ কেউ জোরের সাথে বলে যে অন্যদের তুলনায় তারা একটু স্পষ্টভাবে শুনতে পেয়েছে।

পরীক্ষা করার আগে, তাদের চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল; দুইজন টোন (সিজোফ্রেনিয়া এবং স্ব-নির্ণিত ভৌতিক কন্ঠস্বর শুনে যারা তাদের নির্ণিত করা হয়) শুনতে পায় এবং দুইজন (সুস্থ মানুষ এবং ভৌতিক স্বর কণ্ঠস্বর শুনতে পায় না) শুনতে পায় না। প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে “হ্যাঁ” বা “না” বাটন চাপতে বলা হয়, যদি তারা টোন শুনে বা শুনে না এর উপর ভিত্তি করে। তারা তাদের সিদ্ধান্তের সাথে যতবেশী আত্মবিশ্বাসী , তারা তত লম্বা সময় ধরে বাটনটি চাপিয়ে রাখবে।

অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কম্পিউটার মডেলিং খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে। যাদের মারাত্মক হ্যালুসিনেশন সমস্যা রয়েছে এতে দেখা যায় তাদের সেরিবেলামের( cerebellum) মধ্যে কার্যকারীতা খুব কম। আসলে মস্তিষ্কের cerebellum হচ্ছে ভবিষ্যতের কার্যকলাপ পরিকল্পনা এবং সমন্বয় করার জন্য কাজ করে । তাহলে দেখা যাচ্ছে সেরিবেলামের প্রয়োজন আপনার বিশ্বাসগুলো বাইরের জগৎ সম্পর্কে আপডেট করাতে সক্ষম করা যা পরীক্ষার ফলাফলগুলো বাকিদের সাথে মানানসই।

পূর্বের গবেষণার পূনর্বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে জনগণের অনুমান ও প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশনের সাথে সহসম্পর্ক আছে।  কিন্তু এখন কেন? বেশী বেশী গবেষণা ও মেশিন শিক্ষার কৌশলগুলো সাইকোটিক ও নন-সাইকোটিক স্বর শোনে যারা তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যবহৃত হতে পারে। এর অর্থ এই যে ভবিষতে গবেষকগণ হয়তো নির্ণয় করতে সক্ষম হবে যদি মানুষ হ্যালুসিনেশনের অভিজ্ঞতা থেকে মানসিক সমস্যার দিকে ধাবিত হয়, এবং যদি তাই হয়, তাহলে তাদের আরো ভাল চিকিৎসা দিতে সক্ষম হয়।

তথ্যসূত্রঃ

  1. http://www.iflscience.com/brain/five-cool-ways-trick-your-brain/
  2. http://science.sciencemag.org/content/357/6351/596
  3. https://www.eurekalert.org/pub_releases/2017-08/aaft-hpa080717.php
  4. https://www.nobelprize.org/educational/medicine/pavlov/readmore.html
  5. http://www.iflscience.com/brain/new-study-offers-insight-emergence-hallucinations/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.