পৃথিবীর সর্বপ্রথম বৃহদাকার প্রাণীগুলোর একটিকে আবিষ্কার করা হল

আর্টিস্টের বানানো র‍্যাঞ্জিওমর্ফ মডেল (না, একে উদ্ভিদ ভেবে ভুল করবেন না)

এধরণের টবে রাখা চাড়াগাছ আপনি বিভিন্ন বাসায়, অফিসে শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে দেখে থাকতে পারেন। কিন্তু এগুলো আসলে পৃথিবীর প্রথম বড় প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি।

এগুলোকে বলা হয় র‍্যাঞ্জিওমর্ফস (rangeomorphs)। এই এলিয়ানের মতো দেখতে প্রাণীরা ২ মিটার (৬.৬ ফুট) পর্যন্ত উঁচু হয়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও টোকিও ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি-এর গবেষকগণ সম্প্রতি এদের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করেন এবং তারা মনে করেন এগুলো প্রথম দিকের প্রাণীদের মধ্যে একটা, তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী এরা “আকৃতি স্থানান্তর” (shapeshift) করতে সক্ষম ছিল। এই গবেষণা সম্প্রতি নেচার ইকোলজি এন্ড ইভ্যোলুশন জার্নালে প্রকাশিত হয়।

 

এই প্রাণীগুলো এডিয়াক্যারান পিরিয়ডে (Ediacaran period) ৬৩৫ ও ৫৪১ মিলিয়ন বছর পুর্বে বেঁচে ছিল। তবে এটা বলা খুবই শক্ত যে তাদের আচরণ ঠিক কেমন ছিল, কারণ বর্তমানে পৃথিবীতে তাদের কাছাকাছি এমন কোন প্রাণী নেই। প্রকৃতপক্ষে তারা এতটাই আলাদা যে আধুনিক যুগের কোন প্রাণীদের দলের সাথে এদেরকে সম্পর্কিত করাও খুব শক্ত।

 

এই পেপারের প্রথম অথর এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সাইন্স ডিপার্টমেন্ট ও টোকিও টেক-এর আর্থ-লাইফ সাইন্স ইন্সটিটিউট এর ডক্টর জেনিয়ার হোয়েল কুথিল একটি বিবৃতিতে বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসের সেই নির্দিষ্ট পয়েন্টে কেন এই বড় প্রাণীগুলোর আবির্ভাব ঘটে, আমরা সেটাই জানতে চেয়েছিলাম। ফসিল রেকর্ড থেকে যে বিশাল আকারটি উঠে আসল তা দেখে আমরা অভিভূত হয়ে গেলাম। এই বড় আকারের কারণ কী? এটা কি কেবলই একটা কোইন্সিডেন্স নাকি মহাসাগরীয় রসায়নের একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল?”

র‍্যাঞ্জিওমর্ফের একটি ফসিল

গবেষকগণ ফসিলগুলোকে কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রাপ্ত প্রচুর ফসিলকে মাইক্রো-সিটি স্ক্যানিং ও ফটোগ্রাফিক মেজারমেন্ট এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন। তারপর তারা সেই তথ্যগুলো কম্পিউটার মডেলিং সফটওয়ারে প্রয়োগ করেন।

বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া যায়, ফসিল রেকর্ডের প্রাণীটি একেবারে সর্বপ্রথম পুষ্টি নির্ভর বৃদ্ধির বা নিউট্রিয়েন্ট ডিপেন্ডেন্ট গ্রোথ এর সাক্ষ্য-প্রমাণ দান করে। এখান থেকে বোঝা যায় যে, এই প্রাণীটির মধ্যে “ইকোফেনোটাইপিক প্লাস্টিসিটি” ছিল, অর্থাৎ এদের শরীরের আকার ও আকৃতি তাদের গৃহীত পুষ্টির উপর নির্ভর করত।

“It’s probably too early to conclude exactly which geochemical changes in the Ediacaran oceans were responsible for the shift to large body sizes, but there are strong contenders, especially increased oxygen, which animals need for respiration.”

রেঞ্জিওমোর্ফস-এর উত্থান একটি বরফযুগের সময়কালের সাথে সমসাময়িক, যা গ্যাস্কিয়ার গ্লাসিয়েশন (Gaskiers glaciation) নামে পরিচিত। এটি সমুদ্রের রাসায়নকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। এর ফলে অক্সিজেনে ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আকষ্মিকভাবে বেড়ে যায়, আর এরকম বড় প্রাণীর উত্থান ঘটার পথ সহজ হয়ে যায়।

ডক্টর কাটহিল বলেন “এডিয়াক্যারানের সময় পৃথিবীর মহাসাগরে অনেক বড় পরিবর্তন ঘটে বলে মনে করা হয়, এর ফলে প্রাণীদের বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়ে যায়, আর এজন্যই পৃথিবীতে প্রাণ বড় আকারের হতে শুরু করে। এখনই বলা যাচ্ছে না যে, এডিয়াকেরানের মহাসাগরের ঠিক কোন ভূ-রাসায়নিক পরিবর্তনটি বড় আকারের শরীরের বিবর্তনের জন্য দায়ী ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে শক্তিশালী দাবীদারটি হচ্ছে, বিশেষত অক্সিজেনের বৃদ্ধির জন্যই এই আকারের পরিবর্তনটি ঘটে, যে অক্সিজেনের দ্বারা প্রাণীরা শ্বাস গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।”

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.nature.com/articles/s41559-017-0222-7
  2. http://www.cam.ac.uk/research/news/big-shape-shifting-animals-from-the-dawn-of-time

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.