আমাদের পূর্বপুরুষেরা মিশরের পথ ধরেই আফ্রিকা ত্যাগ করে

যখন বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকেই এসেছে, তারা এই বিষয়ে পরিষ্কার নন যে তারা ঠিক কোন পথ দিয়ে এই মহাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। এবারে গবেষকগণ সম্ভবত একটা পরিষ্কার ছবি দিতে পেরে এই মহাকাব্যিক ভ্রমণ রহস্য এবং দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটাতে পেরেছেন। আমেরিকান জার্নাল অফ হিউম্যান জেনেটিকস –এ ৪ জুন, ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় তারা প্রস্তাব করেছেন, প্রাচীন মানবেরা ইথিওপিয়া নয়, বরং মিশরের মধ্য দিয়ে আফ্রিকা থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেন।

পূর্বে বিজ্ঞানীগণ আমাদের পূর্বপুরুষেরা ঠিক কোন পথে আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রা শুরু করে তা নির্ণয় করতে সক্ষম হয়নি। তারা বুঝতে পারছিলেন না এরা দক্ষিণ দিকের পথ ধরে ইথিওপিয়া ও এরাবিয়ান পেনিনসুলার মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিল নাকি উত্তরের পথ দিয়ে—মিশর ও সিনাই এর পথ ধরে যাত্রা করেছিল। এই দুটো পথই ছিল প্রস্তাবিত সাম্ভাব্য যাত্রাপথ। আফ্রিকা থেকে ঠিক কোন পথ ধরে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল তা বের করার জন্য এই দুটো যাত্রাপথের মধ্যে কোনটি সঠিক তা বের করতে হবে। আর তা বের করার জন্যই এই গবেষণায় গবেষকগণ আধুনিক মিশর ও ইথিওপিয়া থেকে ২২৫ জনের হোল-জিনোম সিকোয়েন্স সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেন।

ওয়েলকাম ট্রাস্ট স্যাংগার ইন্সটিটিউট ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিড-অথর ডক্টর লুকা প্যাগানি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের গবেষণার সবচেয়ে চমৎকার ফলটা হচ্ছে, সকল ইউরেশিয়ানের ইতিহাসের যে পর্বটা পর্দার আড়ালে ছিল তা সামনে আনা, কোটি কোটি মানুষের বিবর্তনগত ইতিহাস বুঝতে সক্ষম হওয়া। উত্তেজনার বিষয়টা হল এই, এই জিনোমিক যুগে আমরা জীবিত মানুষের ডিএনএ এর দ্বারা ৬০ হাজার বছর আগের প্রাচীন ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারছি। ভবিষৎ চিকিৎসা ও নৃতাত্তিক গবেষণার জন্য অবাধ রেফারেন্স প্যানেল হিসেবে এই তথ্য খুব মূল্যবান হবে।”

যদি প্রাচীন মানবেরা মিশর হয়ে গমন করে থাকে তাহলে আধুনিক অ-আফ্রিকানদের সাথে মিশরীয়দের মধ্যে বেশি জিনগত সাদৃশ্য থাকবে। যদি তারা ইথিওপিয়া হয়ে গমন করে তাহলে আধুনিক অ-আফ্রিকানদের সাথে ইথিওপিয়দের জিনগত সাদৃশ্য বেশি থাকবে।

পূর্বের গবেষণাগুলো থেকে দেখা যায় মিশরীয় ও ইথিয়পীয় উভয়ের জিনোমই পশ্চিম এশিয়ার জনগণের সাম্প্রতিক জিন ফ্লো বা জিনের প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আর তাই গবেষকগণ মিশরীয় ও ইথিওপীয়দের জিনোম থেকে প্রাপ্ত সাম্প্রতিক অ-আফ্রিকান পূর্বপুরুষের উপাদানগুলো বাদ দিয়েছেন। এই বাদ দেবার পর তাদের জিনোমে যা অবশিষ্ট ছিল সেখানে থেকে এই গবেষণায় দেখা যায়, মিশরীয়দের জিনোমেই আফ্রিকার বাইরের উপাদানের ফ্রিকোয়েন্সি বেশি এবং অ-আফ্রিকান জিনোমের সাথে এদের জিনোমের জেনেটিক সাদৃশ্যই সবচেয়ে বেশি।

ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজি ও এথ্রোপলোজি বিভাগের সিনিয়র অথর ডক্টর টুমাস কিভিসিল্ড বলেন, “যদিও আমাদের ফলাফল গুলো আফ্রিকার বাইরের সম্প্রসারণের সময় ও সম্ভাব্য জটিলতা নিয়ে কিছু প্রকাশ করছে না, তবুও খুব স্পষ্টভাবেই এটা বলছে যে আফ্রিকা থেকে মানুষের প্রধান মাইগ্রেশন বা অভিপ্রায়ণটি দক্ষিণের পথ ধরে না হয়ে উত্তর দিক দিয়েই হয়েছিল।”

গবেষকগণ আশা করছেন আরো প্রাচীন জিনোম ডেটার সাহায্যে তারা প্রাথমিক মানব অভিপ্রায়ণ সম্পর্কিত আরও জটিলতার জট খুলতে সক্ষম হবেন, বিশেষ করে তাদের অভিপ্রায়ণের সময় নিয়ে জটিলতা এবং অন্যান্য অভিপ্রায়ণ সম্পর্কিত জটিলতা যা বর্তমান জিনোমিক্সে অনুপস্থিত।

 

তথ্যসূত্রঃ

  1. http://www.cell.com/ajhg/fulltext/S0002-9297(15)00156-1
  2. https://www.eurekalert.org/pub_releases/2015-05/wtsi-ooaphp
  3. https://www.eurekalert.org/pub_releases/2015-05/cp-eaephp

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.