যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে নেয়া মানুষের শতকরা হার ২৫ বছরে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে!

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে কিভাবে খুব দ্রুত সমলিঙ্গের প্রতি ধারণা পরিবর্তিত হতে পারে। একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে বিগত ২৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী সম্পর্ককে মেনে নেয়া মানুষের শতকরা হার প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া মানুষ ১৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে এই শৎকরা পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ শতাংশে। কেবল তাই নয়, একই সময়ে সমকামী যৌন অভিজ্ঞতা স্বীকার করা মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে।

সকল প্রজন্মের মধ্যেই সমলৈঙ্গিক যৌনতা মেনে নেয়ার ব্যাপারটি লক্ষ্য করা গেলেও ৩০ বছর বয়সীদের চেয়ে কম বয়স্কদের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা নাটকীয়। ১৯৯০ সালে এদের শৎকরা পরিমাণ যেখানে ১৫ শতাংশ ছিল, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ শতাংশে। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম সমকামিতাকে বেশি মেনে নিচ্ছে এবং সমলৈঙ্গিক বিবাহকেও তারা অনেক বেশি সমর্থন করছে। একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রে চার জনের মধ্যে তিন জন সমলৈঙ্গিক বিবাহকে বৈধ করার পক্ষে।

রিপোর্টটিতে এও অনুসন্ধান করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কত শতাংশ মানুষ সমলিঙ্গের সঙ্গী থাকার ব্যাপারটি স্বীকার করেন। এখানে দেখা যায় এটি স্বীকার করা প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার ৪.৫ শতাংশ থেকে ৮.২ শতাংশ হয়েছে, এবং নারীদের ক্ষেত্রে এই হার হয়েছে ৩.৬ শতাংশ থেকে ৮.৭ শতাংশ। সমকামী যৌন অভিজ্ঞতা পাওয়া ব্যক্তির শতকরা হারের সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে দেশটির দক্ষিণ ও মিডওয়েস্ট অঞ্চলের শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে, এদিকে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই পরিবর্তন খুব কম দেখা গেছে। গবেষণাটির লেখক বলেন, কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই হার তেমনভাবে না বৃদ্ধি পাবার কারণ হতে পারে, এখনও সমকামিতার বিষয়ে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় খুব গোড়া।

এই নাটকীয় পরিবর্তনটি সম্পূর্ণভাবে জেনারেশন এফেক্ট নয়। লেখকগণ বলেন, এটা সম্ভবত সময়ের সাথেও সম্পর্কিত। এটি নির্দেশ করে, এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে। তারা এর কারণ হিসেবে দেখান, অতীতের শক্তিশালী সামাজিক নিয়মগুলো এখন দুর্বল হয়ে গেছে, সমাজে এখন ইন্ডিভিজুয়ালিজম বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের পছন্দ মত কাজ করতে পারে, জীবনযাপন করতে পারে।

আর্কাইভ অব সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়র জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটির কো-অথর এবং সান ডিয়েগো ইউনিভারসিটির প্রফেসর জিন টোয়েঞ্জ ব্যাখ্যা করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের মনোভাব ও আচরণের মধ্যে এই বিশাল পরিবর্তনটি মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই এসেছে। এটি দ্রুত সাংস্কৃতিক পরিবর্তন নির্দেশ করছে। এই ধারাটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির আরেকটি সাক্ষ্যপ্রমাণ বহন করে যা দেখাচ্ছে এই সমাজ এখন পূর্বের চেয়ে আরও বেশি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী এবং নিজের সম্পর্কে এবং সমানাধিকার সম্পর্কে বর্তমান আরও বেশি মনোযোগী।”

গবেষণাটিতে ৩০,০০০ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় যারা জেনারেল সোশ্যাল সারভে দ্বারা পরিচালিত এই কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে এই জাতীয় সারভে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। সমলৈঙ্গিক সম্পর্কের ব্যাপারে মানুষের মনোভাবের ব্যাপারে এই প্রতিষ্ঠানটি সবসময়ই প্রশ্ন করে গিয়েছে, কিন্তু আশির দশক থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি সেক্সুয়াল পার্টনারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে। সমলৈঙ্গিক সম্পর্ককে সঠিক বলে মনে করে না এরকম প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা ১৯৯০ সালের মধ্যে তেমন বৃদ্ধি পায় নি (১১ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ)। আর এই ব্যাপারটি এই নাটকীয় পরিবর্তনকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.eurekalert.org/pub_releases/2016-06/sdsu-maa052716.php
  2. http://www.theguardian.com/world/2016/jun/01/us-survey-shows-dramatic-rise-in-acceptance-of-same-sex-relationships
  3. https://www.bostonglobe.com/news/nation/2015/06/26/almost-millennials-support-same-sex-marriage/upgBZbZ9IvJXY0ZMOElgtN/story.html
  4. http://link.springer.com/article/10.1007/s10508-016-0769-4/fulltext.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.