তাহলে আসলেই মহাবিশ্বের জন্য বিগব্যাং এর প্রয়োজন ছিল

পদার্থবিজ্ঞানীগণ এবারে দেখালেন বিগ ব্যাং ছাড়া মহাবিশ্বের স্মুদ স্টার্টিং বা মসৃণ সূচনার যে বিকল্প তত্ত্বটি আছে, তা সত্য হতে পারে না। পটসড্যামের ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট ফর গ্রাভিটিশনাল ও কানাডার পেরিমিটার ইন্সটিটিউট এর গবেষকগণের একটি দল দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে “স্মুথ বিগিনিং” বা ‘মসৃণভাবে সূচনা’ আমাদের মহাবিশ্বের মত একটি মহাবিশ্বকে তৈরি করতে পারে না।

যখনই মহাবিশ্ব ব্যাখ্যার কথা আসে বিগ ব্যাং একটা চমৎকার দৃঢ় তত্ত্ব বলেই বিবেচিত হয়, কিন্তু যখন মহাবিশ্বের সূচনার বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করা হয় তখন আমাদের সকল পদার্থবিজ্ঞান ভেঙ্গে যায়। এই ব্যাখ্যাহীন বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টার জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত পদার্থবিজ্ঞানের সাহসী নতুন তত্ত্ব ও কয়েকটি নতুন পন্থা ব্যবহার করা হয়েছে।

দুটো বিখ্যাত হাইপোথিসিজ ১৯৮০ এর দশকে বিগ ব্যাং কে সমাধান করার প্রস্তাব করেছিল। কসমোলোজিস্ট জেমস হার্টল ও স্টিফেং হকিং “নো বাউন্ডারি প্রোপোজাল” প্রস্তাব করেছিলেন। এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে তৈরি করা হাইপোথিসিজ ছিল যেখানে বলা হয় মহাবিশ্বের কোন শুরু নেই।

আরেকটি প্রস্তাবিত ধারণা অসীম পদার্থের ঘনত্ব সমস্যা বা ইনফিনিট ম্যাটার ডেন্সিটি ইশ্যু সমাধান করার চেষ্টা করে। একটি সিঙ্গুলারিটিতে (অনন্যতায়) সীমিত পদার্থ নিয়ে মহাবিশ্ব তার শুরু করে। এই সিংগুলারিটি হচ্ছে রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতা অনুযায়ী এর শূন্য ভলিউম নিয়ে একটি একক পয়েন্ট এবং এটাই তত্ত্বটিকে ভেঙ্গে ফেলে। আলেকজান্ডার ভিলেনকিন এই সমস্যার সমাধানের জন্য ‘টানেলিং প্রোপজাল’ পেশ করেছিলেন। তিনি সেখানে কোয়ান্টাম টানেলিং নীতিটি ব্যবহার করে এটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন যে, একটি সীমিত পদার্থের ঘনত্ব বা ফিনিট ম্যাটার ডেন্সিটি আমাদের মহাবিশ্বকে তৈরি করতে পারে।

এই দুটো আইডিয়ার জন্যই মহাবিশ্বকে স্মুদ বা মসৃণ হতে হবে। এই আইডিয়াগুলো অনুসারে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য কোন ড্রামেটিক জাম্প বা নাটকীয় লম্ফনের প্রয়োজন নেই। না এখানেই শেষ নয়। আমরা জানি পদার্থবিজ্ঞান বিগ ব্যাং এর আগে ও পরে সব সময় কাজ করে। কিন্তু যখননি ‘সূচনা’ এর ব্যাখ্যার সময় আসে তখনই সামনে সমস্যাটা এসে যায়।

ফিজিক্যাল রিভিউ ডি -তে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে যে, এই দুটো আইডিয়াকে এক্সট্রাপোলেট করলে বা পেছন দিকে বর্ধিত করলে দেখা যায়, এগুলোর ফলে প্রচুর কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন উৎপন্ন যার ফলে পরবর্তীতে মহাবিশ্বের বৃদ্ধিই বন্ধ হয়ে যায়।

ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউড ফর গ্রাভিটিশনাল ফিজিক্স এর কো-অথর জিন লুক লেনারস এক বিবৃত্তিতে বলেন, “‘নো-বাউন্ডারি প্রোপোজাল’ নিয়ে হিসাব করলে দেখা যায়, এর ফলে আমরা এখন যে মহাবিশ্বে আছি সেরকম বিশাল মহাবিশ্ব তৈরি হয় না, বরং একটি ক্ষুদ্র কারভড মহাবিশ্ব তৈরি হয় যা খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।”

এই ব্যাপারটি বের করে আনতে অতি পরিশীলিত ও অত্যাধুনিক গাণিতিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়েছে। আর তাই এই ৩৫ বছরের পুরনো তত্ত্বগুলো কি করে এতদিন ধরে টিকে থাকল এটা ভেবে অবাক হবার কিছু নেই। দলটি বরং এখন দেখছে, অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই স্মুদ ইউনিভার্স প্রোপোজালটিকে টিকিয়ে রাখা যায় কিনা।

যাই হোক, তাহলে বিগ ব্যাং এর রহস্যটা আপাতত রহস্যই থেকে যাচ্ছে, এর রহস্যের সাথে লড়াইটা না হয় অন্য কোন দিনের জন্য তোলা থাকুক। কিন্তু একটা সময় নিশ্চই আসবে যখন একটা নতুন আইডিয়া দিয়ে সব কিছু কিভাবে হল তার চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হবে। আপাতত সেদিনের জন্য অপেক্ষা করা যাক।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.einstein-online.info/spotlights/quantum_cosmo_path_integrals#section-2
  2. https://journals.aps.org/prd/abstract/1103/PhysRevD.95.103508
  3. https://arxiv.org/abs/00192
  4. http://www.aei.mpg.de/2062163/ohne-urknall-geht-es-nicht

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.