তুরস্ক স্কুলে বিবর্তন সম্পর্কে শেখানো বন্ধ করে দিচ্ছে

জাপানের ফুকুই পারফেকচুরাল ডাইনোসর মিউজিয়ামে রাখা একটি ভাষ্কর্য যা বৈজ্ঞানিক চিন্তা এবং বিবর্তনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে

তুরস্কের শিক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তাগণ ঘোষণা দিয়েছেন, তুরস্কে স্কুল ছাত্রছাত্রীদেরকে বিবর্তন ও নেচারাল সিলেকশন (বা প্রাকৃতিক নির্বাচন) পড়ানো বন্ধ করে দেয়া হবে। তাদের কাছে এটি বন্ধ করে দেবার যুক্তি হল, তরুণ ছাত্রছাত্রীদের বোঝার জন্য তাদের কাছে বিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনকে খুব জটিল এবং বিতর্কিত বলে মনে হচ্ছে।

দেশটির এডুকেশন চিফ ঘোষণা করেছেন, নতুন কারিকুলাম অনুসারে দেশটির ৯ম গ্রেড পর্যন্ত শিক্ষাপ্রদানের জন্য স্ট্যান্ডার্ডাইজ করা জীববিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক থেকে “বিগিনিং অব লাইফ এন্ড ইভোল্যুশন” নামের অধ্যায়টি সরিয়ে দেয়া হবে। এই বিষয়টি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্যই রাখা হবে।”

তুরস্কের এডুকেশন অথোরিটির চেয়ারম্যান আলপআরসালান ডারমাস গত সপ্তাহে একটি ভিডিও প্রচার করেন যা রয়টার্স নিউস এজেন্সি অনুবাদ করে। সেখানে বলা হয়,”আমরা এই বিষয়ে সতর্ক যে, যদি আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এই প্রতিজ্ঞা (premises) এবং প্রকল্পটির (hypotheses) বোঝার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে, বা তাদের মধ্যে এই বিষয়ক জ্ঞান এবং সাইন্টিফিক ফ্রেমওয়ার্ক না থাকে, তাহলে তারা কিছু বিতর্কিত বিষয় বুঝতে সক্ষম হবেনা, তাই আমরা এগুলোর কিছু জিনিস সরিয়ে দিয়েছি।”

বিখ্যাত ইভোল্যুশনারি বায়োলজিস্ট রিচার্ড ডকিন্স এই খবরটি শুনে রীতিমত বিষ্মিত হয়ে গেছেন। তিনি জানান, “তুরস্কের বিজ্ঞানীগণ এই বিষয়ে সম্মত হবেন যে, ঠিক যেমনটা প্লেট টেকটোনিক এর নড়াচড়া ও সূর্যের চারদিকে গ্রহগুলোর ঘুর্ণন খুব শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সত্য, তেমনি বিবর্তনও একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।… আমি এই হাস্যকর তুর্কী শিক্ষানীতির প্রস্তুতকারকদেরকে বিদ্রূপকারী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপণকারী (“cynical political manipulators”) হিসেবেই ধরে নিচ্ছি। কিন্তু আসলে আমি ভয় পাচ্ছি যে, তাদেরকে প্লেইন স্টুপিড বললেই আরও বেশি ঠিক হয়।”

রেলিজিয়ন এবং পাবলিক লাইফ নিয়ে তৈরি ২০১৩ সালের একটি রিপোর্টে উঠে আসে, তুরস্কের ৪৯ শতাংশ মুসলিম বিশ্বাস করেন, “সময়ের শুরু থেকেই মানুষ এখনকার মতই ছিল”। তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬২ শতাংশ লোক বিবর্তনে বিশ্বাস করেন।

১৯২৩ সালের রিপাবলিক অব তুর্কীর জন্মের পর থেকে দেশটি গর্বের সাথে ধর্মনিরপেক্ষ হবার মর্যাদা অর্জন করেছে। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপ্রতি এরদোগানের সরকারের এই আমলে, বিগত কিছু বছর ধরে অনেকে এই মন্তব্য করছেন যে, দেশটি তার ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি থেকে সরে যাচ্ছে, আর ধীরে ধীরে এটি একটি রক্ষণশীল ধর্মতন্ত্র বা কনজারভেটিভ থিওক্রেসির পথেই আগাচ্ছে।

নন প্রোফিট এডুকেশনাল অর্গানাইজেশন সেন্টার ফর ইনকোয়ারি এর প্রেসিডেন্ট এবং সিইও রবিন ব্লামনার বলেন, “বিবর্তন “খুব জটিল” এমন দাবীটি অযৌক্তিক এবং তুরস্কের ছাত্র ও শিক্ষকদের জন্য অপমান। আমরা মিডল স্কুল সায়েন্স টিচারদের সাথে কাজ করেছি, আর এখান থেকে আমরা জানি যে, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা খুব সহজেই বিবর্তনের মৌলিক নীতিগুলো বুজ্ঝতে পারে। তাছাড়া প্রাকৃতিক নির্বাচন, যা পৃথিবীতে সকল প্রাণের বৈচিত্র্য তৈরির প্রক্রিয়া – এটি ছাত্রছাত্রীদেরকে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। কীভাবে সরকার এটা ছাত্রছাত্রীদের না শেখানোর কথা বিবেচনাই বা করতে পারে?”

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.eba.gov.tr/uzem/ttkb
  2. http://www.reuters.com/article/us-turkey-education-evolution-idUSKBN19E1RA
  3. http://www.centerforinquiry.net/newsroom/cfi_and_richard_dawkins_decry_turkeys_unconscionable_prohibition_on_teachin/
  4. http://www.pewforum.org/files/2013/04/worlds-muslims-religion-politics-society-full-report.pdf
  5. http://www.secularism.org.uk/news/2017/03/turkish-secularists-fear-erdogans-theocracy-as-referendum-looms

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.