চার্লস ডারউইনকে হতভম্ব করে দেওয়া এক প্রাচীন প্রাণীর রহস্যময় ডিএনএ সমাধান

বিজ্ঞানীরা যেভাবে ভেবেছেন Macrauchenia patachonica সম্পর্কে পূনর্গঠনের পর

ডারউইন যখন তার বিখ্যাত জাহাজ এইচএমএস বিউগল যাত্রায় ১৮৩৪ সালে একটি বিদ্ঘুটে বরফ যুগের প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন তখন তিনি হোচটই খেয়েছিলেন। অবশ্য তার কাছে এটা সামান্য হাড় বা জীবাশ্মই ছিল। এমনকি উনি সেই ফসিলের নমুনাগুলো কোন প্রাণীর তা বেরও করতে পারেননি। কয়েক বছর পর সেই হাড়গুলো বিখ্যাত প্যালিওন্টোলজিস্ট রিচার্ড ওয়েন এর কাছে পাঠানো হয় তা বের করার জন্য, কিন্তু তিনিও পারেন নি। ১৮০ বছরেরও বেশী পরে তার রহস্য রয়েই গেছিল।

এক নতুন গবেষণায় অবশেষে বিবর্তনীয় বৃক্ষে এই অদ্ভুত প্রাণীটির ডিএনএ পূনর্গঠন করা সম্ভব হয়। এই গবেষণা প্রকাশিত হয় নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে। গবেষণাটি পরিচালনা করে ইউনিভার্সিটি অফ পটসড্যাম।

প্রশ্নবিদ্ধ এই প্রাণীটি হচ্ছে Macrauchenia patachonica  আর এটি ২০ হাজার থেকে ১০ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এর গলা লম্বা, এটি লম্বা-শরীর গঠনের স্তন্যপায়ী, দেখতে অনেকটা উট, জিরাফ এর মতো এবং বাচ্চাদের দেখতে ফ্যান্টাসি মুভির হাতিদের মতো। তবে অস্পষ্ট মিলগুলো থাকা সত্ত্বেও এই Macrauchenia patachonica এর কোন নিকটবর্তী আত্মীয় আর জীবিত নেই, ফলে এর সনাক্তকরাও বেশ জটিল।

নতুন প্রজেক্টের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা হতে হাড়ের নমুনাগুলো একত্রিত করা হয় এবং এগুলোর প্রাচীন কোলাজেন প্রোটিন থেকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বেড় করা হয়। গবেষকগণ আবিষ্কার করেন এই প্রাণীটি যে লিনিয়েজের অন্তর্ভূক্ত ছিল তা ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পেরিসোডাকটাইলা নামক দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসে। পেরিসোডাকটাইলা হচ্ছে একটি বেজোর আঙ্গুল বিশিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণীর অর্ডার যার মধ্যে ঘোড়া, গন্ডার ও ট্যাপির অন্তর্ভূক্ত। নতুন প্রাণীটির দল ও পেরিসোডাকটাইলার দলটি ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিচ্ছিন্ন হয় বলে মনে করছেন গবেষকগণ।

পটসড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ প্যালিওজেনোমিক্স মিচি হোফ্রেইটের সিএনএন-কে বলেন, “এই গ্রুপটির ট্রি অব লাইফ সম্পর্কে জানার একটা সুযোগ আমরা এখন পেয়েছি, তাই আমরা এখন আরো ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি কিভাবে এই প্রাণীগুলোর বিবর্তন ঘটেছে”।

ডিএনএ-সিক্যুয়েন্স এর অর্জনটা কম নয়। বছরের পর বছর ধরে ডিএনএ এর ক্ষয় হতে থাকে, আর এই ক্ষয় আরও বেশি হয় যখন হাজার হাজার বছর ধরে এটি কোন উষ্ণ পরিবেশে থাকে। গবেষকদেরকে এই প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণীর কাছ থেকে কার্যকরভাবে জেনেটিক উপাদানের সংক্ষিপ্ত সিক্যুয়েন্সের ডিএনএ-এর ছোট ছোট অংশ গুলো একত্রিত করতে হয়েছে। এই কঠিন কাজটি করতে হয়েছে কারণ এই প্রাণীগুলোর কোন নিকট আত্মীয় প্রজাতি জীবিত নেই যাতে তারা “মিসিং স্পেস গুলো পূরণ করতে পারে।”

হফরেইটার বলেন, “প্যালিওন্টোলজিস্টগণ এই আধুনিক কাল আসার পূর্বে এইসব প্রাণী নিয়ে খুব বিভ্রান্ত ছিল। এরকম কেবল খুব দূরবর্তী আত্মীয় থাকা প্রজাতির থেকে শর্ট ডিএনএ সেগমেন্ট নিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য ডিএনএ সিকোয়েন্স তৈরি করা আসলেই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।”

“প্যালিওন্টোলজিস্টরা এই আধুনিকযুগেও প্রাণীগুলো নিয়ে এখনো বিভ্রান্ত” বলেন হোফ্রেইটের।“একমাত্র দূরবর্তী সম্পর্কিত প্রাণীদের সাথে এই সংক্ষিপ্ত ডিএনএ বিভাজন থেকে বিশ্বাসযোগ্য সিক্যুয়েন্স পূনর্গঠন, সত্যি খুবই কঠিন। … বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সফটঅয়ারের কল্যাণে আমরা প্রাচীন ডিএনএ নিয়ে যা যা করতে সক্ষম হয়েছি তা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি প্রচণ্ড অগ্রগতি। আর এই আবিষ্কারটি বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিরই একটি প্রমাণ ।”

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://friendsofdarwin.com/articles/owen/
  2. https://www.nature.com/articles/ncomms15951
  3. http://edition.cnn.com/2017/06/27/world/extinct-animal-ungulate-macrauchenia-darwin-tree-of-life/index.html
  4. http://gizmodo.com/scientists-use-ancient-dna-to-identify-bizarre-species-1795693727

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.