গবেষণাগারে ব্ল্যাকহোলের সিমুলেশন তৈরি করে প্রমাণ করা হল সুপাররেডিয়েন্সের সত্যতা

ব্ল্যাকহোলের এনালগ

আমরা এখনও গবেষণাগারে ব্ল্যাকহোল তৈরি করতে পারি না, কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম এর গবেষকগণ একটি ব্ল্যাকহোল তৈরির কাছাকাছি সর্বোত্তম জিনিসটি করে দেখিয়েছেন। তারা ব্ল্যাকহোলের একটি ফিজিকাল সিমুলেশন তৈরি করেছেন। একটি পরিশীলিত সেটাপ ব্যবহার করে দলটি একটি “ওয়াটার ব্ল্যাকহোল” তোইরি করেছেন এবং ব্ল্যাকহোলের সুপাররেডিয়েন্স নামের ফেনোমেনাটি দেখিয়েছেন। এই গবেষণাটি নেচার ফিজিক্স  জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষক দলটির নেতা ডঃ সিলকে ওয়েইনফার্টনার বলেন, “এই গবেষণাটি এই কারণে অনেক বেশি উত্তেজনাকর কেননা পদার্থবিদ, ইঞ্জিনিয়ার এবং টেকনিশিয়ান সকলে মিলে এখানে একটি সাধারণ উদ্দেশ্যে কাজ করেছে, যেটা হল ব্ল্যাকহোলের অবস্থাকে সিমুলেট করা এবং প্রমাণ করা যে সুপাররেডিয়েন্স এর অস্তিত্ব আসলেই আছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই গবেষণাটি এস্ট্রোফিজিক্স এর সুপাররেডিয়েন্স পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত আরও গবেষণা করতে উৎসাহ প্রদান করবে।”

সুপাররেডিয়েন্স হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের একটি খুবই ইন্টারেস্টিং একটি বৈশিষ্ট্য। যখন কোন তরঙ্গ ব্ল্যাকহোলের কাছে যায়, এটা হয় ব্ল্যাকহোলের ভেতরে ঢুকে যাবে, অথবা এই ব্ল্যাকহোলের চারদিকে ঘুরে বেড়াবে এবং ব্ল্যাকহোল থেকে কিছু শক্তি চুরি করে নেবে। পেনরোজের মেকানিজমের পেছনে এই ফিজিকাল ফেনোমেননটাই কাজ করে। পেনরোজের মেকানিজমটি হল ব্ল্যাকহোল থেকে শক্তি বের করে নিয়ে আসার একটি তাত্ত্বিক উপায়।

সুপাররেডিয়েন্স কে হকিং রেডিয়েশনের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখা হয়, যদিও হকিং রেডিয়েশনটি জেনারেল রিলেটিভিটির কোন ফলাফল নয়, বরং এটি একটি কোয়ান্টাম মেকানিকাল এফেক্ট।

ওয়েইনফার্টনার বলেন, “ব্ল্যাকহোলের কিছু অদ্ভুত ফেনোমেনা আছে যেগুলো নিয়ে গবেষণা করা খুব কঠিন। এর অর্থ হচ্ছে এগুলোর পরীক্ষণগত সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আমাদের এই গবেষণাটি একটি অসাধারণ অর্জন।”

তবে এটাই ব্ল্যাকহোলের একটি এক্সপেরিমেন্টাল মডেল তৈরি করার প্রথম উদ্যোগ নয়। গত দশকের মধ্যেই ইজরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রফেসর জেফ স্টেইনহাওয়ার পরীক্ষা করা যায় এমন ব্ল্যাকহোল তৈরি করতে শব্দকে কাজে লাগিয়েছিলেন।

এই গবেষণার ক্ষেত্রে ওয়াটার-বাথ সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যার ২,২৫০ লিটার জলের (৫৯৫ গ্যালন) ক্ষমতা ছিল। এটা একটি বদ্ধ ওয়াটার সিস্টেম যার মাঝখানে একটি প্লাগ আছে। এই প্লাগ দিয়ে ওয়াটার সরিয়ে নেয়া হয় এবং ব্ল্যাকহোলের সমতুল্য একটি ব্যাপার তৈরি হয়। এরপর একটি মেকানিকাল ব্যবস্থার মাধ্যমে তরঙ্গ তৈরি করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সুপাররেডিয়েন্স তৈরির জন্য নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের তরঙ্গ না তৈরি হয়।

 

এরপর এড-হক সেন্সর দিয়ে সুপাররেডিয়েন্স এর এফেক্ট নিয়ে গবেষণা করা হয়। এই সেন্সরটি পানি ও বাতাসের মধ্যকার তলের থিডি ইমেজ প্রস্তুত করতে পারে। গবেষকগণ তরঙ্গগুলোর সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ এমপ্লিফিকেশন দেখেন, যা তত্ত্ব অনুযায়ী যে অনুমোদিত রেঞ্জ আছে সেটার মধ্যে ভাল অবস্থানেই থাকে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.nature.com/nphys/journal/vaop/ncurrent/full/nphys4151.html
  2. https://www.nottingham.ac.uk/news/pressreleases/2017/june/scientists-make-waves-with-black-hole-research.aspx
  3. http://nature.com/articles/doi:10.1038/nphys3863

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.