দীর্ঘ-শ্বাস-গ্রহণ প্রশান্তি আনার কারণ বিজ্ঞান পেয়েছেন!

দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন, এরপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। যোগব্যায়াম থেকে শুরু করে অবসাদ দূর করার জন্য যতগুলো পন্থা আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায় যা  আমাদের মনকে শান্ত করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটি খুব কার্যকর ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু বিজ্ঞান আমাদেরকে এর পিছনের আসল কারণগুলো সম্পর্কে বলতে পারে।

এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন এ কিছু ফাঁকা জায়গা রয়েছে যা সংরক্ষণ করে রাখে যে কিভাবে আমরা নিঃশ্বাস নিচ্ছি। এবং এরপর এই একই তথ্য পুনরায় পাঠায় আমাদের মস্তিষ্কের অন্য অংশে যেই অংশ আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

এই পরীক্ষাটি কিছু ইঁদুরের ওপর চালানো হয়। গবেষণায় দেখা যায় মস্তিষ্কের এই নিউরনগুলোকে যদি ধ্বংস করে ফেলা যায় তবে অতি চালাক ইঁদুরেরা শান্ত হয়ে যাবে এবং তাদের সতর্কতামূলক আচরণ শিথিল যাবে।

৯০ এর দশকের গবেষণায় দেখা যায়, আনুমাণিক ৩০০০ নিউরন আমাদের মস্তিষ্কের শাখায় লুকায়িত রয়েছে যা আমাদের নিশ্বাস প্রশ্বাস কে মনের সাথে সংযুক্ত রাখে। কিন্তু এটি আসলে কিভাবে কাজ করে তা এখনও পর্যন্ত পুরপুরি জানা যায় নি।

এই রহস্যের সমাধানের জন্য সর্বশেষ গবেষণা প্রকাশিত হয় সায়েন্স নামক একটি জার্নালে। গবেষক দলটি এই পরীক্ষা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়  যে সেখানের জিনগুলো সক্রিয়ভাবে এই অঞ্চলে কেমন সক্রিয়। তারা ইঁদুরের শ্বাস নেওয়ার পেসমেকার ১৭৫টি নিউরনে স্থাপন করে এবং দেখে সেগুলো কিভাবে সক্রিয় হচ্ছে।

শুরুতে তেমন কিছু ঘটতে দেখা যায়নি এবং দলটি মনে করেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তখন তারা লক্ষ্য করলো যে কিছু একটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, “এই প্রাণীগুলোর মধ্যে পরিবর্তন আসছিল, কো-অথর মার্ক ক্রাসনো এনপিয়ার কে বলেন। ইঁদুর গুলো ঠান্ডা ও শান্ত হয়ে যায়।

ইঁদুরগুলো খাঁচায় চারদিকে না ঘুরাঘুরি করে বরং নিজেকে গুটিয়ে শান্ত হয়ে থাকে। তাদের শ্বাস নেওয়ার অবস্থান পরিবর্তন হওয়ায় মনে হয় যেন তারা ধীর ও নিয়ন্ত্রিত।

বস্তুত, গবেষকগণ লক্ষ্য করেন এই ইঁদুরগুলোর আচরণ এবং যেসব মানুষ মস্তিষ্কের সতর্কতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা অংশের কার্যক্ষমতা হারিয়েছে তাদের অবস্থা একই। একটি বিষয় তাদেরকে অবাক করেছিল এবং একই সাথে তারা সন্দিহান ছিলেন যে শ্বাস প্রশ্বাস পেসমেকার এর জন্য এবং মস্তিষ্কের যেই অংশ মনকে নিয়ন্ত্রণ করে তার জন্য এই ১৭৫ টি নার্ভ মেডিয়েটর হিসেবে কাজ করে কি করে না।

তারা মনে করেছিলেন  নিউরন ছাড়াই উত্তেজনার কেন্দ্রটি শ্বাস পেসমেকার হতে তথ্য পায়নি, এবং মস্তিষ্ক সতর্ক হয়নি। এর অর্থ শ্বাস প্রশ্বাস ধীর হয়েছিল কারণ উত্তেজনার কেন্দ্র হতে শ্বাস পেসমেকার কোন প্যানিক সংকেত দেয়নি। দলটি একটির শ্বাস নিয়ন্ত্রণ অনুশীলনের পরে এই ১৭৫ টি নিউরণ প্রাণায়াম নিউরণে স্থাপন করেছিল ।

যদিও এই ক্ষেত্রে এখনো অনেক কিছু করার আছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। তবে এটা বলা সম্ভব যে, শ্বাস নেওয়া এবং মনের অবস্থার মধ্যে শারীরিক যে সংযোগ রয়েছে তা বেশ জটিল আমাদের আবেগ ও মানসিক চাপের ক্ষেত্রে। যোগ এবং ধ্যান হাজার হাজার বছর ধরে এসব ধারণার উপর নির্ভরশীল । বর্তমানে গবেষকগণ যেটি ইঁদুরের জন্য সত্যে সেটি মানুষের জন্য সঠিক কি না তাই দেখতে চায়।

তথ্যসূত্রঃ

  1. http://med.stanford.edu/news/all-news/2017/03/study-discovers-how-slow-breathing-induces-tranquility.html
  2. http://science.sciencemag.org/content/355/6332/1411.full
  3. https://www.newscientist.com/article/2126381-destroying-a-type-of-brain-cell-makes-mice-really-chilled-out/
  4. http://www.npr.org/sections/health-shots/2017/03/30/522033368/a-tiny-spot-in-mouse-brains-may-explain-how-breathing-calms-the-mind
  5. http://www.npr.org/sections/health-shots/2017/03/30/522033368/a-tiny-spot-in-mouse-brains-may-explain-how-breathing-calms-the-mind

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.