ভাষা, লিঙ্গবাদ এবং নারীবাদ

কাল এক জায়গায় একটা ট্রোল ছবি দেখলাম। সেখানে লেখা ছিল, ‘…বিয়ের আগে বরপক্ষের বিশেষ প্রশ্ন “মেয়ে ভার্জিন তো?”… আগে তোর ছেলেকে জিজ্ঞেস কর যে ও কটা মেয়ের ভার্জিনিটি নষ্ট করেছে…’।

এই উক্তিটিতে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এখানে সমস্যাটা হচ্ছে নারীর উপর “ভার্জিনিটি নষ্ট হওয়া” আর পুরুষের উপর “ভার্জিনিটি নষ্ট করা” ইমপ্লাই করা হচ্ছে। অর্থাৎ নারীর ভার্জিনিটি নষ্ট হয় আর পুরুষ ভার্জিনিটি নষ্ট করে। এখানে ভার্জিন এর পূর্বব্যবহৃত সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে ভারজিনিটি বা সতীত্ব কনসেপ্টটা কেবল নারীদের উপরেই প্রযোজ্য হয়, পুরুষের উপর না। অর্থাৎ এই সংজ্ঞায় কন্সেন্সুয়াল সেক্সের ফলে নারীর সতীত্ব বা ভার্জিনিটি নষ্ট হয়, পুরুষ সতীত্ব বা ভার্জিনিটি নষ্ট করে। কিন্তু এই কনসেপ্টটি যথেষ্ট সেক্সিস্ট বা লিঙ্গবাদী বলে পরে ভারজিনিটির সংজ্ঞাই পরিবর্তিত হয়ে যায়।

নতুন সংজ্ঞা অনুসারে ভারজিনিটি অর্থ হল সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে কোন ব্যক্তির কখনও এংগেজড না হবার অবস্থা। এই সংজ্ঞা অনুসারে পুরুষও ভার্জিন হতে পারে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কনসেন্সুয়াল সেক্স বা সম্মতিসূচক যৌনতাতেই ভার্জিনিটি হারানো বলা হয়, রেপ বা ধর্ষণের ক্ষেত্রে “ভারজিনিটি হারানো” টার্মকে ব্যবহার করা হয় না।

শব্দের অর্থের পরিবর্তনের ফলে ভার্জিনিটি শব্দটি আর সেক্সিস্ট থাকল না। এই ইংরেজি শব্দটির সেক্সিস্ট ইমপ্লিকেশন দূরিভূত হল। সস্যুরের স্ট্রাকচারালিজম অনুসারে কোন ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ, শব্দের অর্থ দ্বারা সেই ভাষাভাষীর সমাজের অবস্থা, সমাজের ব্যক্তির মানষিক অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ পায়। ইংরেজিতে ভার্জিনিটি শব্দটির অর্থ বদলে গেছে, পুরুষেরা নিজেদের অবস্থা বোঝাতে ভার্জিনিটি শব্দটিকে ব্যবহার করছে, এতে ইংরেজি ভাষাভাষীদের নতুন মানষিকতাও ফুটে উঠছে। তাদের শব্দ থেকে সেক্সিজম দূর হচ্ছে, এর অর্থ হল তাদের সমাজ থেকে সেক্সিজম দূর হচ্ছে। কিন্তু একই জিনিস এই শব্দটির বাংলা কাউন্টারপার্টের ক্ষেত্রে একটু ভাবি তো। এই লেখাটিতেই দেখলাম “ভার্জিনিটি” টার্মটিকে সেক্সিস্ট কনসেপ্টে বোঝানো হয়েছে। মানলাম আমাদের অনেকেই “ভার্জিনিটি” শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করে না। কিন্তু এর বাংলা কাউন্টারপার্ট “সতীত্ব” শব্দটি কতটা জেন্ডারনিউট্রাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়? পুরুষের ক্ষেত্রে “সতীত্ব” থাকা, “সতী” থাকা বা “সতীত্ব হারানো” শব্দাংশগুলো কতটা ব্যবহৃত হয় আমাদের সমাজে?

এখানে বলতে পারেন, ব্যাকরণগতভাবে বা ব্যুৎপত্তিগতভাবে “সতী” শব্দটাই স্ত্রীলিঙ্গ। তাই জেন্ডার নিউট্রাল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এই নারীবোধক ব্যুৎপত্তি ভারজিন শব্দটির ক্ষেত্রেও ছিল। ভারজিন শব্দটি এসে ল্যাতিন virginem থেকে যা দ্বারা অবিবাহিত নারীকেই বোঝাত। কিন্তু সেই নারীবাচক শব্দটিই আজ জেন্ডার নিউট্রাল হয়ে গেছে।

ভাষা আকাশ থেকে টপকে পড়ে না। ভাষা ছাড়া চিন্তা ভাবনা করাও সম্ভব হয় না, তাই এমনও না যে বিবর্তনের ফলে আমাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সাইজে বেড়ে গেল, বিশাল একটা মস্তিষ্ক পেলাম আর এরপর ভাষা ডেভলপ করলাম। বরং মস্তিষ্কের উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের মাঝে ভাষা এসেছে। একটু একটু করে ভাষা এসেছে, সেটা দিয়ে চিন্তা করেছি, সেটার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক আরও বড় হয়েছে, চিন্তার ক্ষমতা বেড়েছে, ফলে ভাষা আরও জটিল হয়েছে। তাই মানুষের মানুষ হবার সাথে তার ভাষার অগ্রগতি জড়িত। পরে সমাজ সংস্কৃতি গঠনের সাথে সাথে মানুষের ভাষা আরও জটিল হয়, মস্তিষ্কও আরও উন্নত হয়। আর এর মাধ্যমে ব্যক্তির সাংস্কৃতিক মানষিকতাও ফুটে ওঠে তার ভাষায়। সেই সমাজ ও সংস্কৃতি অনুসারেই গড়ে ওঠে ভাষাটির স্ট্রাকচার, ভাষার শব্দগুলোর অর্থ, ভাষার কাঠামো।

এখানে সংস্কৃতি বলতে কেবল সমাজের কৃষ্টি, শৈলী, ঢং বোঝাচ্ছে না। সেক্সিজম বা লিঙ্গবাদ, নারী-পুরুষের বৈষম্য এগুলোও কিন্তু সংস্কৃতি বা কালচারেরই অংশ। যাই হোক, সমাজ সংস্কৃতির প্রয়োজন অনুসারে ভাষা, শব্দ ও শব্দের অর্থ বা স্ট্রাকচার গড়ে ওঠে। আর ভাষার স্ট্রাকচার গড়ে উঠলে সেই ভাষাভাষী সেই স্ট্রাকচারের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারে না। ভাষা তাদের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। কারণ চিন্তার জন্য শব্দ, ভাল করে বললে শব্দের অর্থ লাগে। সে শব্দ বা শব্দের অর্থই এখনও ভাষায় আসে নি সেদিকে চিন্তা যাবে কি করে। যখন সমাজ বিবর্তনের ধাপে নতুন প্রয়োজনীয়তা তৈরি হবে, চিন্তা করার সামষ্টিক প্রয়োজনীয়তা তৈরি হবে তখন সমাজ নিজে থেকেই নতুন শব্দ তৈরি করবে, শব্দভাণ্ডারের অর্থের পরিবর্তন করবে, আর এভাবে ভাষাও বদলে যাবে। যেমন এক হাজার বছর পূর্বের বাংলা ভাষার সাথে এখনকার বাংলা ভাষায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। ভাষার স্ট্রাকচার মানুষের চিন্তাধারাকে সীমাবদ্ধ করে রাখে বলে পোস্টমডার্ন আন্দোলনের একটি অংশ পোস্টস্ট্রাকচারালিজম স্ট্রাকচারের বাইরে গিয়ে চিন্তা করার প্রয়াস নেয়। পোস্টমডার্ন কবিতাগুলোতে এই প্রয়াস দেখা যায়। সেদিকে আর গেলাম না।

সেপির হোর্ফ হাইপোথিসিজ নামে একটা নীতি আছে। একে প্রিন্সিপল অব লিংগুইস্টিক রিলেটিভিটিও বলে। যাই হোক, এই নীতি অনুসারে, একটা ভাষার স্ট্রাকচার সেই ভাষাভাষী মানুষের ওয়ার্ল্ড ভিউ বা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কগনিশন বা বোধগম্যতাকে প্রভাবিত করে। এই নীতির দুটো ভারশন আছে। শক্তিশালী ভারশনটি বলে ভাষা চিন্তা এবং জ্ঞানীয় বিভাগকে (cognitive category) সীমাবদ্ধ করে। দুর্বল ভারশনটি বলে ভাষা চিন্তা ও সিদ্ধান্তগ্রহণকে প্রভাবিত করে। এই নীতিটি আমাদের দেখিয়ে দেয়, কেন কোন সমাজকে ইচ্ছানুরূপ বদলে দিতে চাইলে, সংস্কৃতি পরিবর্তিত করতে চাইলে আগে ভাষায় নজর দিতে হয়, সেই ভাষা এবং ভাষার শব্দভাণ্ডারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং পরিকল্পিতভাবে কাঙ্ক্ষিত ভাষার শব্দ সেই ভাষার শব্দে ঢুকিয়ে দিতে হয়। এই নীতির কথা যখন বলেই ফেলেছি তখন এর সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু জিনিস বলে ফেলি। এই নীতি থেকে আমরা বুঝতে পারি, কেন কোন ধর্মীয় পাঠ মাতৃভাষায় গ্রহণ না করে সেই ধর্মনির্দেশিত ভাষাতেই গ্রহণ করতে বলা হয়, ধর্মীয় শব্দগুলো সেই ভাষাতেই বলতে নির্দেশ করা হয়, সেই সাথে প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় শব্দকেও উক্ত ভাষায় বলার প্ররোচনা দেয়া হয়। নাম রাখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভাষা ব্যবহারের প্রথা তো আছেই। একটি ধর্মকে সঠিকভাবে সমাজে প্রয়োগ করার পূর্বশর্ত হল সেই ধর্মোপযোগী ধর্মের নেটিভ সংস্কৃতিকে সমাজে চাপিয়ে দেয়া। আর নতুন ভাষা চাপিয়ে দেয়া মানে অন্য ভাষার স্ট্রাকচার সেই সংস্কৃতিতে প্রবেশ করানো, যার মাধ্যমে সমাজের মানুষের মানষিকতা, চিন্তাধারাকে সেই ধর্মীয় সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, আর পরিশেষে সমগ্র সমাজকেই ধর্মীয় সংস্কৃতির মধ্যে এনে ধর্মোপযোগী সমাজ গঠন করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম… সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে, প্রয়োজনে ভাষার অর্থ, ভাষার স্ট্রাকচার পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আর সেই স্ট্রাকচারের মধ্যেই থাকে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত ও ব্যাকরণগত অর্থ। এই পরিবর্তনের কারণেই একটা সময় কোন শব্দ দিয়ে যা বোঝানো হত সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এভাবেই ইংরেজিভাষীদের মানষিকতার পরিবর্তনের ফলে ভারজিনিটি শব্দটির অর্থ পালটায়, কিন্তু বাংলাভাষীদের মানষিকতার পরিবর্তন না হবার ফলে সতীত্ব শব্দটির অর্থ পালটায় না।

কিন্তু এখানেও রাস্তা আছে। ভাষার সাথে মানষিকতার মধ্যে এমনই অঙ্গাঅঙ্গি সম্পর্ক যে, মানষিকতা পরিবর্তনের ফলে যেমন ভাষার স্ট্রাকচার পরিবর্তিত হয়ে যায়, তেমনি জোড় করে ভাষার স্ট্রাকচার পরিবর্তন করার ফলে মানষিকতার পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন সতীত্ব শব্দটাকে এর অন্তর্নিহিত সেক্সিজমের জন্য ব্যান করে না দিয়ে যদি আমরা একে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ব্যবহার করতে শুরু করি তাহলে এই শব্দটির স্ট্রাকচারের পরিবর্তন আমাদের মানষিকতাতেও পরিবর্তন আনবে। সেই সাথে আমাদের মধ্যকার সেক্সিজমও দূর হবে।

কথাটা কিন্তু শুধু তাত্ত্বিক না। এর বাস্তবও প্রয়োগও কিন্তু আছে পাশ্চাত্যে শব্দের জেন্ডার নিউট্রালাইজেশন নিয়ে ভাবা হয়। আগে পুলিসম্যান, ফায়ারম্যান, চেয়ারম্যান শব্দগুলো ব্যবহার করা হত। শেষে ম্যান আছে বলে সকলের মাথায় শব্দগুলো আসলে পুরুষের ইম্প্রেশন চলে আসত। পুলিসম্যান, ফায়ারম্যান, চেয়ারম্যান বললে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মনের মধ্যে ধারণা চলে আসত যে এরা পুরুষই হবে। কারণ শব্দগুলোর স্ট্রাকচারেই পুরুষবাচকতা। অর্থাৎ মানুষের মাঝে সেক্সিজম, জেন্ডার স্টেরিওটাইপ তৈরি করতে ভাষা প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলছে। এরপর শব্দগুলোকে জেন্ডার নিউট্রালাইজ করে বানানো হল পুলিস অফিসার, ফায়ার ফাইটার, চেয়ারপার্সন। এখন যেহেতু শব্দে ম্যান নেই তাই শব্দের মধ্যে পুরুষের ধারণাটাও আর আসে না, স্টেরিওটাইপিং বা সেক্সিস্ট চিন্তা আসে না। তো এভাবে কর্মক্ষেত্রে সেক্সিস্ট মানষিকতারও পরিবর্তন হল।

আরও কিছু উদাহরণ দেই। সমাজে স্পিনস্টার, বিচ, হোর, স্লাট, কান্ট ইত্যাদি কিছু অবজ্ঞাসূচক ইংরেজি টার্ম আছে। ইংগা মুশিও নামে একজন তৃতীয় তরঙ্গ নারীবাদী বলেছিলেন এই শব্দগুলোকে অধিগ্রহণ করে প্লেইন ফিল্ডে আনতে হবে। আর এটার জন্য আমাদেরকেই এই শব্দ বেশি করে ব্যবহার করতে হবে। একে ওয়ার্ড রিক্লেমেশন বা শব্দ অধিগ্রহণ বলে। পরে এই কার্যক্রম দেখাও যায়। তৃতীয় তরঙ্গের নারীবাদীরা একধরণের শব্দ অধিগ্রহণ আন্দোলন গড়ে তোলে।

১৯৯৪ সালে ফিফথ কলাম নামে একটা উইমেন ব্যান্ড দল “অল উইমেন আর বিচেস” নামে একটি সিংগেল বার করে। ১৯৯৯ সালে এলিজাবেথ উর্জেল “বিচ: ইন প্রেইজ অব ডিফিকাল্ট উইমেন” নামে একটা বই বার করেন। সেখানে উর্জেল তার দর্শনকে এভাবে ব্যক্ত করেন, “আমি চিৎকার করতে চাই, ইঞ্জিন চালু করতে চাই, যখন আমার ইচ্ছা হয়, ব্লুমিংডেলসে আমার দুর্বার ক্রোধ নিক্ষেপ করতে চাই যদি আমার ইচ্ছা হয়, আমার ইচ্ছা হলে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তিকে বলতে চাই আমার জীবনের খুটিনাটিগুলো। আমি তাই করতে চাই যা আমার ইচ্ছা হয়, তাই হতে চাই যা আমার ইচ্ছা হয়, আর কেবল নিজের কাছেই দিতে চাই সব কৈফিয়ত। আর এটাই সোজাসাপ্টা বিচ ফিলোসফি।”

ওয়ার্ড রিক্লেমেশনের আন্দোলনটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয় ২০১১ সালে স্লাটওয়াকের মধ্য দিয়ে। স্লাটওয়াকের ব্যাকগ্রাউন্ডটা একটু বলি। প্রথম স্লাটওয়াক শুরু হয় টরন্টোতে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিলে, টরন্টোর একজন পুলিস অফিসার, মাইকেল সানগুইনেত্তির বিবৃতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে। তার বিবৃতি ছিল, “পুরুষের শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য নারীদেরকে স্লাটদের (বেশ্যার) মত পোশাক পড়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।” স্লাটওয়াক আন্দোলন খুব দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশে নারীরা এই “স্লাট” শব্দটিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য স্লাটওয়াক আন্দোলনের অংশ হিসেবে কুচকাওয়াজ করেন। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ছিল এরকম, যদি ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীরা স্লাট হয়, তাহলে সকল নারীই স্লাট, কারণ যেকোন নারী যেকোন পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই ধর্ষণের শিকার হতে পারে।

যাইহোক, এই ওয়ার্ড রিক্লেমেশন মুভমেন্টের ফলে ডেরোগেটরি টার্মস বা অবজ্ঞাসূচক শব্দগুলোর ব্যাবহারের ক্ষেত্রে কিরকম পরিবর্তন আসে তা সময় বলে দেবে। কিন্তু আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই শব্দের ব্যবহারের পরিবর্তনের একটা উদাহরণ দিতে পারি। তিন চার বছর হল “বিচ প্লিজ” নামে একটা শব্দাংশ খুব শুনছি। একটু বয়স্ক যারা তাদের কাছে এই ফ্রেজটা হয়তো অপরিচিত লাগবে, কিন্তু আমার মত তরুণ যারা তাদের মধ্যে এটি খুব পপুলার। আর এটা কেবল নারী না, নারী পুরুষ সবার উপরেই প্রয়োগ করা হয়, ফান করেই করা হয়। প্রয়োগটা এমন, কোন ব্যক্তি তার কোন অসাধারণ কৃতকর্মের জন্য গর্ব করে একটা পোস্ট দেন আর সেই অসাধারণ কৃতকর্মটি যদি অন্য আরেকজনের কাছে একটা মামুলি ব্যাপার হয়, অর্থাৎ তিনি তার চাইতেও অসাধারণ ব্যাপার সাধারণভাবে সম্পাদন করে থাকেন তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির পোস্ট দেখে বলেন “বিচ প্লিজ”। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হতে পারে, মাথায় যেটা আসছে সেটাই বলছি। একটা ট্রোল পিকের উপরের অংশে দেখানো হচ্ছে একটা ছেলে গর্ব করে তার পোষা তিনটা ডোভারম্যান কুকুর দেখিয়ে সেল্ফি তুলে পোস্ট দিয়ে ভাব দেখাচ্ছে। ট্রোলের নিচের অংশে গেম অব থ্রনস টিভি সিরিজের ডেনেরিস টারগারিয়ান এটা দেখে বলছে “বিচ প্লিজ”। এর কারণ হল এইচবিও এর বিখ্যাত টিভি সিরিজ গেম অব থ্রনস এর বিখ্যাত ক্যারেক্টার ডেনেরিস টারগারিয়ানের তিনটা পোষা ড্রাগন আছে, তিনটা ডোভারম্যান কুকুর তার কাছে কিছুই না।

যাই হোক, উপরের উদাহরণটি দিয়ে যেটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম, তা হল শব্দের জেন্ডার নিউট্রালাইজেশন হোক আর ওয়ার্ড রিক্লেমেশন হোক, সমাজে তার একটা প্রভাব আছে। আর “বিচ প্লিজ” এর মত তরুণদের মধ্যে পপুলার হওয়া সাধারণ ফ্রেজগুলো দেখে মনে হচ্ছে ওয়ার্ড রিক্লেমেশন মুভমেন্টগুলো হয়তো বিফলে যায় নি, এর একটা সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট আছে। সাথে এটাও বলতে চাচ্ছি, আমরা যদি আমাদের ভাষা ও শব্দের ব্যবহারবিধির দিকে একটু নজর দেই (যেমন উপরে সতীত্ব শব্দটির ব্যবহার নিয়ে বললাম) তাহলে এর একটা সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট পড়বে, হতে পারে আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে থাকা সেক্সিজমও কমে যাবে, ফলে নারীদের প্রতি বৈষম্য ও শোষণও কমে যাবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.