নাসার এস্ট্রোনটদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগই নারী

১৯৬০ সালে নাসা একজন আশাপ্রদ এস্ট্রোনটকে রিজেকশন লেটার দিয়েছিল একটা সিম্পল কারণে। আর সেই কারণটা হল সেই আশাপ্রদ এস্ট্রোনটটি ছিলেন একজন নারী। সেই সময় নারীদের জন্য এই বিষয়ে কোন ট্রেইনিং প্রোগ্রাম সেট করার জন্য না ছিল কোন উদ্যোগ, না ছিল কোন উদ্দীপনা। আর তারপর আমরা সময়কে বদলাতে দেখলাম। বর্তমানে নাসার এস্ট্রোনটদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগই হলেন নারী। নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি তাই রিপোর্ট করেছে।

এস্ট্রোনটদের জন্য নাসার একেবারে লেটেস্ট ট্রেইনিং প্রোগ্রামের জন্য লোক নিয়োগ করা হয় ২০১৩ সালে। এদের সকলেই ছিল মঙ্গল গ্রহে মানব অভিযানের জন্য সব সম্ভাবনাময় ক্যান্ডিডেট। নাসা এই অভিযানগুলো ৩০ এর দশকের শেষের দিকে করবে বলে স্থির করেছে। আমরা জানি, নারী নভোচারী নতুন কিছু নয়। হেলেন শারম্যান, স্যালি রাইড, ভ্যালেন্টিনা তেরেস্কোভারা ইতোমধ্যে দেখিয়েও দিয়েছেন যে এস্ট্রোনট হওয়া লিঙ্গনির্ভর কিছু নয়।

ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে একজন Dr. Jessica Meir বলেন, “মঙ্গল গ্রহ হল সব স্পেস এজেন্সিগুলোর জন্য আসল টারগেট। মঙ্গল আমাদের নিজেদের গ্রহের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক কিছু শেখাতে পারে।”

Dr. Jessica Meir মেরিন বায়োলজির উপর পিএইচডি করেছেন এবং এন্টার্কটিকায় এম্পেরর পেংগুইন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, তাকে অনেক প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হয়েছে। আর মহাকাশও তার কাছে সেরকমই একটা নতুন চ্যালেঞ্জ।

Christina Hammock Koch আরেক জন ক্যান্ডিডেট। তিনিও দক্ষিণ মেরুতে অনেক দিন কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি টেলিস্কোপ নিয়ন্ত্রণের কাজ করতেন। Nicole Aunapu Mann এর ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জীবন। তিনি ইরাকের উপর দিয়ে মেরিন কর্পস এর সাথে ফাইটার জেট বিমান চালিয়েছেন।

এস্ট্রোনট প্রোগ্রামের জন্য সিলেক্টেড হবার জন্য মেয়ার ও তার কলিগদের ৬০০০ জন প্রাথমিক ক্যান্ডিডেট এর সাথে প্রতিযোগীতা করতে হয়েছে। তাদেরকে দুই বছর ধরে টি-৩৮ সুপারসনিক জেট চালাতে হয়েছে, পানির নিচে কিভাবে কমপ্লেক্স টাস্ক করতে হয় শিখতে হয়েছে আর প্রতিনিয়তই “ভমিট কমেট” এ উড়তে হয়েছে। ভমিত কমেট হল একটি প্লেন জার্নি যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দিষ্ট সময় পরপর পৃথিবীর দিকে ড্রাইভ করে জিরো গ্রেভিটি বা শূন্য অভিকর্ষ বল এর পরিবেশকে সিমুলেট করা হয়।

কিন্তু এগুলো যতই কঠিন কাজ হোক, একজন নভোচারীর জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজটি হল দীর্ঘ সময় ধরে পরিবার, পরিজন, বন্ধু, বান্ধব, প্রিয়জনদের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা। লাল রঙ্গের সেই গ্রহটির সাথে পৃথিবীর সর্বনিম্ন দূরত্ব হল ৫৬ মিলিয়ন কিলোমিটার। এর অর্থ হল বর্তমান টেকনোলজি ব্যাবহার করলে সেখানে পৌঁছতে ৯টি মাস লেগে যাবে। এরপরও আছে রিটার্ন জার্নি আর মঙ্গলের বুকে কাটানোর ১টি মাস। মানে তাদের প্রায় দেড় বছরের মত পৃথিবীর বাইরে কাটাতে হবে।

কিন্তু এস্ট্রোনট Anne McClain বলেন, আমরা স্পেসে যা পাই তার মূল্য এরকম ইমোশনাল স্ট্রেইন দিয়ে দেয়াই যায়। স্পেসে পৃথিবীর মত কোন বর্ডার নেই। পৃথিবীতে সব সময় ঝামেলা ঝঞ্ঝাট লেগে থাকে যা স্পেসে নেই। তিনি বলেন, স্পেসে আরও বেশি মানুষের আসা উচিৎ যাতে তারা বুঝতে পারে যে পৃথিবীট কতটা ছোট আর সেখানে আমরা একজন আরেকজনের উপর কতটা নির্ভরশীল।

 

তথ্যসূত্র:
http://nytlive.nytimes.com/womenintheworld/2016/01/11/nasas-latest-class-of-astronauts-is-50-percent-female-and-could-be-heading-to-mars/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.