ভাইরাস নারীদের চেয়ে পুরুষের জন্য বেশি মারাত্মক হয়ে বিবর্তিত

মেডিকেল সাইন্সের অনেক ধাঁধার মধ্যে প্রায়-সমাধান-করা-অসম্ভব-এমন একটি ধাঁধা ছিল, “কেন কিছু নির্দিষ্ট সংক্রামক নারীদের চেয়ে পুরুষকে একটু বেশি সংক্রমন করে।

টিউবারকিউলসিস (TB) দ্বারা আক্রান্ত পুরুষ, দেখা যায়, আক্রান্ত নারীদের চেয়ে ১.৫ গুন বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। আর পাঁচ গুন বেশি, হিউমান  প্যাপিলোমা ভাইরাসে  (HPV) আক্রান্তদের মধ্যে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মনে করেন তারা জানে কেন – নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি মূল্যবান ভাইরাস হোস্ট, আর প্যাথোজেন গুলো বিবর্তিত হল নারীদের পুরুষদের চেয়ে একটু বেশি পছন্দ করে।

সম্প্রতি “নেচার কমিউনিকেশনস” জার্নালে লন্ডনের রয়েল হলোওয়ে ইউনিভার্সিটির এক গবেষকদল একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। যাতে তারা দবি করে যে তারা এই প্রশ্নের উত্তর বিবর্তনের মাধ্যমে দিতে পারেন।

গবেষকদলের একজন, ফ্রান্সিস্কো উবেদা, বললেন – “এমন মনে হয় যে ভাইরাসগুলো নারী জনসংখ্যা সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে বিবর্তিত হচ্ছে”।

“কিছু কিছু রোগ নারীদের জন্য কম মারাত্মক হয়। কারণ, ভাইরাসগুলো চায় তারা মায়ের শরীরের মধ্য দিয়ে তার বাচ্চার শরীরে স্থানান্তরীত হতে, হয় স্তন্যপানের মাধ্যমে অথবা জন্মানোর কোন প্রকৃয়ার।”

ভাইরাস আক্রান্ত হলে রোগে আক্রান্ত হওয়াটাকেই সাদা চোখে স্বাভাবিক বলে মনে হয়। তবে ভাইরাসগুলোর আসল উদ্দেশ্য থাকে নিজের বংশবিস্তার এবং এক হোস্ট থেকে অন্য হোস্টে স্থানান্তরিত হওয়া। রোগাক্রান্ত করা নয়।

আর রোগটা হচ্ছে একটা বিশ্রী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা হোস্ট এবং প্যাথোজেন উভয়ের জন্য দূর্ভাগ্য ডেকে আনে। কারণ, যদি হোস্ট শয্যাশায়ী হয় বা মারা যায় তাহলে প্যাথোজেনগুলো আর বংশবিস্তার করতে পারে না, ছড়াতেও পারে না একশরীর থেকে অন্য শরীরে।

গবেষক দলের একজন ভিনসেন্ট জেনসেন,  নিউ সাইন্টিস্টকে বলেন – “ প্যাথোজেন গুলো কিন্তু রোগ ছড়াতে আসে না, তা হলে তো, সে জিনের পায়ে কোড়াল মারবে”।3

তার মানে এই যে, আপনি যদি স্থানান্তরীত হওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ভাইরাস বা ব্যক্টেরিয়া হোন, যে মা হতে বাচ্চার মধ্যে ছড়াতে পারে, তো আপনি আগে নারীদেরই মনোনীত করে ধন্য করবেন। কারণ, সে হয়, প্রতিদিন যাদের যাদের সংস্পর্শে আসবে তাদের সংক্রমিত করবে, নয়তো তার নিজের বাচ্চাকে।

অপরপক্ষে পুরুষের শুধু একটি সঞ্চালন-সম্ভাবনা থাকে কারন তারা গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান বা স্তন্যপানের মাধ্যমে প্যাথোজেন ছড়াতে পারে না।

উবেদা আর তার টিম, প্যাথোজেন গুলোর স্ট্রেটেজি বুঝে, কেন প্যাথোজেনগুলো পুরুষের চেয়ে নারীদের অনুকূলে তা জানার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাই তারা দেখলেন প্যাথোজেন গুলো নারী পুরুষের ইমিউন সিস্টেমে তাদের উদ্দ্যেশ্য হাসিলের জন্য কিছু করছে কিনা।

ফান্সিস্কো উবেদা রিসার্চগেইটকে বলেন – “আসলে আমদের একটা ব্যাপার অবাক করেছিল, যে নারী পুরুষের এই ভাইরোলেন্স বিষয়ে সকল ব্যাখ্যা ছিল রোগী কেন্দ্রিক। আর, প্যাথোজেন গুলো ছিল একেবারে উপেক্ষিত। আমরা চেষ্টা করলাম এই প্যাথোজেন গুলোর মতো করেই ব্যাপারটাকে দেখার, সেই সাথে এটাও দেখার চেষ্টা করলাম যে, ন্যাচারাল সিলেকশন কিভাবে এই দুই লিঙ্গের মধ্যে একটিকে ফেভর করে”।4

তারা  নারী পুরুষের মধ্যে প্যাথোজেন গুলোর সঞ্চালনের একটি গাণিতিক মডেল হাজির করলেন। আর এটা ব্যবহার করেই একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের স্ট্রাটেজি বুঝার চেষ্টা চালান।

তারা হিউম্যান টি-সেল লিমফটোট্রপিক ভাইরাস টাইপ-১ (HTLV-1)  এর উপরে গবেষনা চালান। এই ভাইরাসটি পাওয়া যায় জাপান, ক্যারিবিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকায়।

HTLV-1  এর কারণে টি-সেল লিউকোমিয়া (শ্বেতকণিকাধিক্যঘটিত রক্তাল্পতা) হয়। আর জাপানে পুরুষের তুলনায় নারীদের লিউকোমিয়া হওয়ার মাত্রা বেশি। কারণ, গবেষনায় দেখা যায় জাপানী নারীদের মধ্যে এটি লিথাল। তবে, ক্যারিবিয়ায় লিউকোমিয়া হওয়ার মাত্রা উভয় লিঙ্গেই সমান।

গবেষকরা এর ব্যাখ্যায় বলেন, ক্যারিবিয়া ও জাপানে নারীদের স্তন্যদান করার প্রবণতা ভিন্ন।

“জাপানী নারীদের অধিকাংশই বেশি সময় ধরে শিশুদের স্তন্যপান করান। সে তুলনায় ক্যারিবিয়ায় নারীদের স্তন্যদান করার প্রবণতা অনেক কম”। উবেদা বলেন, “ ঠিক আকারণেই রোগটি শিশুদের মাঝে ছড়ানোর সুযোগ বেশি পায়”।

এমন অনেক উদাহরণ আছে যা উবেদা আর তাদের এই হাইপোথিসিসকে সমর্থন করে যে, মা থেকে শিশুতে ছড়াতে সুবিধা পাওয়া যায় বলেই ব্যক্টেরিয়া আর ভাইরাসগুলো নারীদের অনুকূলে। আর তাদের মধ্যে বিবর্তনজাত এমন বৈশিষ্ট আছে যে তা নারীদের সুবিধা দেয় দেয়।

এপস্টাইন-বার (Epstein-Barr) আক্রান্ত পুরুষেরা নারীদের তুলনায় হগকিন’স লিম্ফোমায় (Hodgkin’s lymphoma) আক্রান্ত হওয়ার দুইগুন বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আর চিকেনফক্সের কিছু ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষের ঝুঁকি বেশিই থাকে। এই দুই ভাইরাসই মা থেকে শিশুতে স্থান্তরিত হতে পারে।

তবে, “কিভাবে এই ভাইরাস বুঝতে পারে যে এর হোস্ট পুরুষ কি নারী” তা এই হাইপোথিসিস এখনো ব্যাখ্যা করতে পারে না।

জেনসন নিউ সাইন্টিস্টকে বলেন – “প্রথমে আমরা পরীক্ষা করতে পারি যেন ভাইরাসটি ভাবে সে একটি নারী হোস্টে আছে। তখন এর প্রতিক্রিয়া আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি”।4

 

 

  1. http://www.sciencealert.com/viruses-have-evolved-to-be-more-deadly-to-men-than-women-study-suggests
  2. https://www.newscientist.com/article/2115987-viruses-may-have-evolved-to-hit-men-hard-but-go-easy-on-women/
  3. https://www.researchgate.net/blog/post/viruses-may-have-evolved-to-be-more-deadly-to-men-than-women
  4. https://www.newscientist.com/article/2115987-viruses-may-have-evolved-to-hit-men-hard-but-go-easy-on-women/

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.