নোবেল প্রাইজ ২০১৬ রিভিউ: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মেশিনের জন্য রসায়নে নোবেল প্রাপ্তি

২০১৬ সালে রসায়নের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন একই সাথে জিন পিয়েরে সভেজ, স্যার ফ্রেসার স্টডার্ট এবং বার্নার্ড ফেরিংগা। তারা যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অব স্ট্রসবার্গ, নর্দওয়স্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি এর গ্রনিংগেন এর গবেষক। এই তিনজন রসায়নের জাদুকর নোবেল পুরষ্কারটি অর্জন করেছেন তাদের “মলিক্যুলার মেশিন” এর ডিজাইন এবং তৈরির অসাধারণ কাজটির জন্য।

এই নোবেল বিজয়ীগণ তাদের অসাধারণ কৃতকার্যের জন্য ৮ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনর (৯৪০,০০০ ইউএস ডলার) পাবেন যা তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে।

নোবেল কমিটির একজন সদস্য ব্যাখ্যা করেন, কিভাবে  সভেজ, স্টডার্ড এবং ফেরিংগা ক্ষুদ্র ন্যানোমেশিন তৈরি করার জন্য তাদের জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাদের এই ন্যানোমেশিনগুলো ছিল সিম্পল পাম্প এবং সিম্পল ইঞ্জিন এর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ। এই সিম্পল পাম্প এবং সিম্পল ইঞ্জিনকে ঊনবিংশ শতকে তৈরি করা হয়েছিল যেগুলো শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ct_to7xweaa5elj

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “গত শতক থেকে বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন ছিল এই যন্ত্রগুলোকে মলিক্যুলার বা আণবিক স্কেলে তৈরি করা”। ১৯৮৩ সালে সভেজের দল একটি মলিক্যুলার চেইন প্রস্তুত করে। এখানে দুটো রিং আপনাআপনি একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে যেত। এই চেইনের স্কেল ছিল মানুষের চুলের চেয়েও এক হাজার গুণ ছোট। এরপর থেকে তিনটি রিসার্চ গ্রুপ বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র স্কেলের ডিভাইস তৈরি করে আসছেন। তারা এগুলো উদ্ভাবনের দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, ক্ষুদ্র মলিক্যুলার বন্ড বা আণবিক বন্ধনগুলোর মুভমেন্ট বা গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

নোবেল কমিটি থেকে একটা বিবৃতিতে বলা হয়, “তারা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র মেশিন আবিষ্কার করেছেন। এটায় আছে খুবই ক্ষুদ্র একটি লিফট, কৃত্রিম পেশি এবং অতি ক্ষুদ্র মোটর”। এই যন্ত্রগুলোতে অবশ্যই  অণুর সাথে সাথে কিছু নিয়ন্ত্রিত মুভমেন্ট বা গতি আছে, আর এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই আমরা একসময় ন্যানোমেশিনারিতে পূর্ণ ভবিষ্যৎ দেখতে পাব যেখানে এরা সবাই আমাদের ইচ্ছায় কাজ করবে।

প্রফেসর ফেরিংগা সাংবাদিকদেরকে ফোনে বলেন, “আমি জানিনা কী বলব। আমি একটু স্তব্ধ হয়ে গেছি। এটা একটা অসাধারণ সারপ্রাইজ ছিল। আমি এটা নিয়ে অনেক আনন্দিত  এবং সম্মানিত বোধ করছি”। তিনি আরও বলেন, “আমি যখন প্রথম এই অণুগুলোর মধ্যে মুভমেন্ট দেখেছিলাম, আমি বিশ্বাসই করতে পারি নি যে এটা কাজ করেছে। যখনই আপনি এদের মুভমেন্টকে কনট্রোল করতে সক্ষম হবেন, তখন আপনি এদের দিয়ে সব ধরণের কাজ করানোর কথা ভাবতে পারেন। ন্যানোরোবটদের কথা ভেবে দেখুন। ভবিষ্যতে চিকিৎসকগণ ক্যান্সার কোষ খুঁজে বের করার জন্য এগুলোকে মানুষের দেহে প্রবেশ  করাতে পারেন”।

ইতিমধ্যেই এই কাজটিতে গবেষকগণ যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। বায়োকেমিকেল উপাদানে মোড়ানো অরিগামি ডিএনএ ক্যাপসুলগুলো শরীরের ভেতরে ক্যান্সার কোষকে টারগেট করতে পারে।

ফেরিংগা আরও বলেন, “আমার এখন রাইট ব্রাদারদের মত উনুভূতি হচ্ছে। সেসময় লোকেরা বলত, “আমাদের ফ্লাইং মেশিন দিয়ে লাভটা কী?” আর এখন বোইং ৭৪৭এস এওং এয়ারবাস আকাশে উড়ছে। এটাই এখন আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে”।

কিভাবে এই প্রাপ্তিকে সেলিব্রেট করবেন ফেরিংগাকে এই প্রশ্নটি করা হলে তিনি উত্তর দেন, তিনি তার সব ক্রেডিট তার দলকে দিতে চান, বিশেষ করে তরুণ ছাত্রছাত্রী ও পোস্টডকদেরকে এই ক্রেডিট তিনি দিতে চান যারা দীর্ঘ দিন ধরে তার সাথে কাজ করেছেন।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2016/press.html

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.