মঙ্গলের মাটিতে ফসল ফলানো নাসার প্রচেষ্টা

A staged photo shoot of the Martian Gardens inside the KSCTV Auditorium.

এলন মাস্ক এর স্বপ্ন আগামি হয়তো পুরণ হতে যাচ্ছে। আর এই স্বপ্ন পুরণ হওয়া মানেই আগামিতে মানুষ মঙ্গলের মাটিতে পা রাখছে অথবা একদিন মঙ্গলের মাটিতে পা রাখবে, এবং পৃথিবী থেকে সব খাবার নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। অর্থাৎ সেখানেই খাবার উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। মঙ্গলের প্রতিকূল মাটিতে যতটুকু সম্ভব খাবার জন্মাতে হবে। সেই লাল গ্রহের আবহাওয়া মন্ডলে নিঃশ্বাস নেওয়ার যোগ্য করার এবং সম্পূর্ণভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের আগে আমাদের জানতে হবে মাটি নিজে নিজেই উর্বর হবে কি না।

সৌভাগ্যবশত, নাসা এই সমস্যা নিয়ে কাজ করছে ক্যানেডি স্পেস সেন্টারে এবং ফ্লোরিডা টেক বাজ আলড্রিন স্পেস ইন্সটিটিউশনে “মার্শিয়ান গার্ডেন” সিমুলেট ব্যবহার করে।

পৃথিবীতে খাদ্য শস্য জন্মাতে সব সময় মাটির প্রয়োজন হয়। নরম, ভেজা, সুন্দর করে জমাট বাধিয়ে মাটি ব্যবহার করতে হয়। “মাটির সংজ্ঞায় বলতে গেলে এর মধ্যে অর্গানিক থাকতে হয়; গাছ, পোকামাকড়, কেঁচোও থাকে, এটা-ই মাটি” ক্যানেডির ফুড প্রোডাক্টশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার রালফ ফ্রিটশে বলেন একটা স্টেটমেন্টে। “মঙ্গলে বাস্তব অর্থে এমন মাটি নেই”।

যদিও সম্ভাব্য উর্বর মাটির পরিবর্তে সেখানকার আগ্নেয়গীরির ধ্বংসাবশেষে প্রচুর ক্ষতিকারক মেটাল এবং  বিসাক্ত পদার্থ যা ভবিষৎ ক্ষুধার্ত বাসিন্দাদের কঠিন হবে।

হাওয়াই দ্বীপের অগ্নুৎপাত
হাওয়াই দ্বীপের অগ্নুৎপাত

মঙ্গলের মাটির কাছাকাছি পৃথিবীতে হাওয়াই দ্বীপের আগ্নেয়গীরি মাটি সংগ্রহ করে, বিভিন্ন পরিমান ভাঙ্গা পাথর, জল, এবং পুষ্টি মিশ্রিত সাথে বিভিন্ন ধরণের শস্যের বীজ নিয়ে কাজ করছেন। আসল উদ্দেশ্য হলো এই অকৃষিকাজ অবস্থাপন্ন মাটিতে শস্য জন্মাতে পারা। প্রজেক্টটি বর্তমানে প্রাথমিক অবস্থায় আছে, কিন্তু যতটা সম্ভব লেটুস ভালভাবে জন্মাতে পেরেছেন।

সাড়ে তিন সপ্তাহের উপর একটি পাইলট গবেষণায় বায়োক্যামিস্ট এবং ইকোলজিস্টরা তিনটি ভিন্ন পরিবেশে লেটুস জন্মানোর লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছেন। একটাতে বায়োক্যামিক্যাল উন্নত করার ব্যবস্থা এবং পুষ্টি, আরেকটায় শুধু মাত্র পুষ্টি, এবং আরেকটিতে পাত্রে বা টবে মাটি তৈরির কাজ হচ্ছে এই পাইলট প্রজেক্টে।

ট্রায়াল শেষের আগেই পরিবেশ উপযুক্ত করার সময়েই ৩০টি বীজের ১৫টি নষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য তাদের মূল গুলো  পর্যাপ্ত শক্তিশালী ছিল না। তারপরও যেগুলো ভাল ছিল সেগুলোয় খাওয়ারযোগ্য লেটুশ ফসল ভালভাবেই জন্মেছে। যদিও মাটি উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে তারপরও সাধারণ মাটির চেয়ে অংকুরোদগমন হার ৩ দিন ধীরগিত সম্পন্ন অর্থাৎ ৩ দিন অতিরিক্ত সময় লেগেছে। এর অর্থ এই যে মঙ্গলের মাটিতে চাষাবাদ করতে পৃথিবীর থেকে একটু বেশী সময় লাগবে।

নয় মাস ব্যাপী পরীক্ষার কারনে পরবর্তীতে আর লেটুস না করে মূলা, সুইস চার্ড, ক্যাইল বা পাতাকপি, চাইনিজ বাধাকপি, স্নো পীস, ছোট পেপারস বা মরিচ এবং টোমেটো করা হয়েছে। যদি সাফল্য আসে, তাহলে মঙ্গলের প্রথম সদস্যরা প্রচুর পরিমাণে সালাদের বাগানের ফ্যান হয়ে যাবে। এটা শুধুমাত্র মঙ্গলের মাটিতে ফসল ফলানোই প্রচেষ্টা নয়। গত জুনে ডাচ বিজ্ঞানীদের একটা দল মুলা, পী, রাই, এবং টমেটো চাষ করার চেষ্টা করেছিল, এগুলো কোনটাতেই স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক কোন হেবি মেটাল যেমন কপার অথবা ক্যাডমিয়াম নেই। তারা অবশ্য আলু, গার্ডেন রকেট এবং ওয়াটারক্রেস চাষ করেছিল, কিন্তু এগুলো খাওয়া নিরাপদ কি না তা আরো পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হবে।

 

তথ্যসূত্রঃ

http://www.nasa.gov/feature/farming-in-martian-gardens

http://www.iflscience.com/plants-and-animals/vegetables-grown-on-mars-are-safe-to-eat-according-to-crop-experiment/

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.