মানুষের একে অপরকে হত্যা করার প্রবণতা সম্ভবত একটি বিবর্তনগত বৈশিষ্ট্য

সকল মৃত্যুর প্রায় ২ শতাংশই ঘটেছে প্রাণঘাতি সংঘর্ষের কারণে

নেচার  জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে মানুষ তাদের বিবর্তনগত পূর্বপুরুষদের দ্বারাই সম্ভবত তাদের প্রাণঘাতি সংঘর্ষের প্রবৃত্তি লাভ করেছে। গবেষণাটি চালানোর সময় গবেষকগণ আবিষ্কার করেন যে, মানুষের সকল মৃত্যুর প্রায় ২ শতাংশই ঘটেছে অন্য কোন মানুষের হাতে। মানুষের এই হত্যার হারটি আমাদের নিকট আত্মীয় প্রাইমেটদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের যে হার দেখা যায় তার সমান।

সৌভাগ্যবশত, এখন সবাই নিজেকে আর এরকম সংঘাতে জড়িয়ে রাখে না, যদিও গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন যে মানুষেরা সম্ভবত একজন আরেকজনকে হত্যা করার জন্য জিনগতভাবে পূর্বনির্ধারিত। কিন্তু তারা এও খুঁজে পান যে, মানুষের এই লিথাল ভায়োলেন্স বা প্রাণঘাতি সংঘাতের মাত্রা সভ্যতার অগ্রযাত্রার সাথে সাথে কমে এসেছে। আর এটা নির্দেশ করছে যে আমাদের সংস্কৃতি আমাদের হত্যার প্রবৃত্তিকে কমিয়ে দিয়েছে।

গবেষকদের দলটি ১৩৭টি ট্যাক্সনমিক ফ্যামিলির ১০২৪টি প্রজাতির থেকে সংগৃহীত  মৃত্যুর তথ্য উপাত্ত একত্র করেন। আর এর মাধ্যমে দলটি বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে লিথাল ভায়োলেন্স এর মাত্রা নির্ণয় করেন। একই সাথে তারা ৫০,০০০ বছর পূর্বের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০টি ভিন্ন ভিন্ন মানব সমাজের মাঝের মৃত্যুর সাধারণ কারণগুলোর আর্কিওলজিকাল এবং ইথনোগ্রাফিক রেকর্ড নিয়েও ঘাটাঘাটিও করেন।

এই গবেষণাগুলোর মধ্যে দিয়ে ৪০ শতাংশ প্রজাতির মধ্যে হত্যাকাণ্ডের এভিডেন্স পাওয়া যায় যেখানে ০.৩ শতাংশ মৃত্যুই ঘটেছে একই প্রজাতির অন্য প্রাণীর দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে। অতঃপর ফাইলোজেনিক মেথডগুলো ব্যবহার করে, অর্থাৎ ইভোল্যুশনারি ট্রি এর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ট্রেইট বা বৈশিষ্ট্যকে ট্র্যাকিং করার মাধ্যমে গবেষকগণ আবিষ্কার করেন যে, লিথাল ভায়োলেন্স বা প্রাণঘাতি সংঘর্ষের দ্বারা মানুষের মৃত্যুর শতকরা হার আর একই কারণে আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেট এবং এপদের মৃত্যুর হার সমান।

কিন্তু বাদুড় আর তিমির মত অন্যান্য ক্লেডদের বেলায় এই মারাত্মক সংঘর্ষ অনুপস্থিত। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষকগণ উপসংহার টেনেছেন যে, “স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ফাইলোজেনিতে আমাদের নিজেদের বিশেষ অবস্থানের কারণে আমাদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার প্রাণঘাতি সংঘাত উপস্থিত”।

যাই হোক, এই গবেষণাটি আমাদেরকে একটি উৎসাহদানকারী বার্তাও দিচ্ছে। গবেষণাটির লেখক ব্যাখ্যা করেন যে, বিভিন্ন ট্রাইব এবং ক্ল্যানে বসবাসকারী প্রাচীন মানুষদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রাণঘাতি সংঘাত দেখা গেলেও আধুনিক সমাজে এই সংঘাত ফাইলোজেনিক ইনফারেন্স এর চেয়ে কম। তাই এটা বলই যায় যে আমরা একে অপরকে হত্যা করার জন্য সম্পূর্ণভাবে নির্ধারিত নই, কারণ সভ্যতার অগ্রযাত্রার ফলে আমাদের মাঝে একধরণের সিভিলাইজিং এফেক্ট কাজ করছে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://nature.com/articles/doi:10.1038/nature19758

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.