গবেষকগণ বানরদের ভাষাকে অনুবাদ করতে সক্ষম হয়েছেন

একটি ক্যাম্পবেলস মাংকি। এটি পরিবেশের সাথে নিজের ভাষাকে এডাপ্ট করে ফেলেছে।

২০১৪ সালে বানরদের ভাষা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল। সেই গবেষণায় দেখানো হয়ে যে, বানরদের যে একটি নির্দিষ্ট ভাষাই আছে তাই নয়, এদের ভাষায় অঞ্চলভেদেও অনেক তারতম্য দেখা যায়। অর্থাৎ, বানরদের মধ্যে আঞ্চলিক ভাষাও আছে। গবেষণাটি লিংগুইস্টিক্স এন্ড ফিলোসফি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। আমাদের সাথে আমাদের নিকট আত্মীয় বানরদের ভাষাতত্ত্বের পার্থক্য এবং এর মধ্যে দিয়ে তাদের সাথে আমাদের চিন্তার ভিন্নতা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছিল সেই গবেষণায়। এখানে বানরদের নিজস্ব ভাষার ব্যাপারেই আলোকপাত করা হবে।

রহস্যময় দ্বীপ তিওয়াই। সিয়েরা-লিওনের মধ্যে বিশাল বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, পিগমি হিপোপোটেমাস, শত প্রজাতির পাখি এবং বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাইমেটদের মধ্যে ক্যাম্পবেল বানরদের বসত-বাড়ি এই দ্বীপ। আর এই ক্যাম্বেল বানরেরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে একটি উন্নত ভাষায় যা প্রাইম্যাটোলজিস্টসরা এবং লিংগুইস্টরা কয়েক দশক ধরে গবেষণা করছেন। বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি তাদের শব্দ ভান্ডারের কোডগুলো বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

অন্যান্য সামাজিক প্রজাতিদের মতোই, ক্যাম্বেল বানরেরা বিপদের সময় তাদের সঙ্গীদের সর্তক করার আহ্বান জানায়। আইভরি কোস্টের ‘টাই’ ফরেস্টে বানরদের চেচামেচির রেকর্ডিংগুলোয় দেখানো হয় যে, বাননেরা শব্দ ব্যবহার করে। “ক্রাক” উচ্চারণের একটি শব্দ দ্বারা চিতাবাঘ আসছে বুঝিয়ে সতর্ক করে এই বানরেরা। “হক” শব্দ দিয়ে ঈগল কে বোঝায়। এভাবে অন্যান্য শব্দ দিয়ে বিপদ সংকেত দেয়। তুলনামূলক কম হুমকি নির্দেশের ক্ষেত্রে তারা শব্দের শেষে “উ” প্রত্যয়ও ব্যবহার করে, তাই “ক্রাক-উ” শব্দ দিয়ে বোঝায় একটু চোখ খোলা রাখো বা সতর্ক থাকো, যখন “হক-উ” শব্দ করে তখন এটা দিয়ে ঈগলের ভয়টা কম বোঝায়। এটা নির্দেশ করে যে, গাছের উপরে না থেকে নিচের দিকে নেমে আসো, ঈগল আসতে পারে।

তবুও, যখন সিয়েরা-লিওনের তিওয়াই দ্বীপের বানরদের নিয়ে গবেষণা করা হয় তখন দেখা যায় একই শব্দ তারা ভিন্ন অর্থ বোঝাতে ব্যবহার করে। দ্বীপে ঈগল হতে সতর্ক করতে “হক” এর পরিবর্তে “ক্রাক” শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়, ‘ফ্রান্স ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইন্টিফিক রিসার্স’ এর ফিলিপ স্লেংকার সাইন্টিফিক আমেরিকান কে বলেন, “এটা বেশ অশ্চর্যের, কারন ‘ক্রাক’ শব্দটা সম্ভবত চিতাবাঘের জন্য সতর্কতার ক্ষেত্রে ব্যবহায় হয়”।

এই পার্থক্যের সাম্ভাব্য কারণ হচ্ছে তিওয়াই-এ কোন চিতাবাঘ নেই। লিংগুইস্টিক এন্ড ফিলোসফি-তে স্লেংকার এবং তার সহকারীরা উপসংহারে টানেন, যে কোন হুমকি ছাড়াই ‘ক্রাক’ ফাংশন তিওয়াইতে সাধারন সতর্ক সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অবশ্য এই বিষয়টাতে আশ্চর্যের কিছু নেই, বানরেরা ভৌগলিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ডাকে বা কথা বলে। যেমন ব্রিটেইন এবং আমেরিকা ‘দুই দেশ আলাদা তাদের সাধারণ ভাষায়”। এমনকি একটি দেশে একই শব্দ স্থানীয় ভাষার অর্থ হিসেবেই ব্যবহার হতে পারে।

মানুষের যোগাযোগের অবস্থার প্রেক্ষাপটে স্লেংকার ব্যাখ্যা করেন এভাবে “আসল রহস্য টা হচ্ছে আমরা সাধারণভাবে একটু বিষদ বা নির্দিষ্ট শব্দ দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি। বিভিন্ন শব্দের মধ্যে প্রকাশের দিক থেকে একটা প্রতিযোগীতা থাকে, আর আপনি একাধিক শব্দের মধ্যে অধিক তথ্যবহুল শব্দটিই প্রকাশ করতে চান”।

প্রিমিটিভ প্রাণী হিসেবে বানরদের পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে নেওয়ার ঘটনা সত্যি আমাদের বেশ ভাবায় কারণ আমরা এখন দেখছি যে, তাদের ভাষা আছে আর এই ভাষা তাদের আরো ভালভাবে টিকে থাকতে সহায়তা করছে। স্লেংকার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তাদের এই অবস্থায় ক্রাক-উ এবং হক উভয়ের চেয়ে ক্রাক আরো বেশি তথ্যবহুল। তিনি আরো বলেন, “বানরটি যদি ক্রাক শুনতে পারে, তাহলে সে বুঝতে পারে যে ব্যাপারটা আর ক্রাক-উ আর হক শব্দের অর্থের মত এতটা মামুলি ব্যাপার নয়, ব্যাপারটা আরও তথ্যবহুল, আর তারা তাতে আরও বেশি সতর্ক হয়ে যায়। এসময়ে যদি তারা ক্রাক কে ক্রাক-উ বা হক বলে মনে করে তাহলে অবশ্যই তারা ভুল বুঝবে”।

যখন বানরদের জীবনে অনেকগুলো থ্রেট থাকে তখন তাদের জন্য আলাদা আলাদা থ্রেট বা বিপদের জন্য এক একটি নির্দিষ্ট শব্দের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে ক্রাক বলতে চিতাকেই বোঝায়, কারণ চিতার জন্য তাদের একটি স্পেসিফিক বা নির্দিষ্ট শব্দের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যদি বানরদের জীবনে একটাই বড় থ্রেট থাকে তখন তারা শুধু তার বেলাতেই “ক্রাক” শব্দটি ব্যবহার করে। সেটা চিতাও হতে পারে আবার ঈগলও হতে পারে।

বানরেরা কিরকম বিপদের বেলায় কিরকম শব্দ ব্যাবহার করে এই বিষয়ে নিশ্চিন্ত হবার জন্য স্লেংকারকে সাথে নিয়ে প্রাইমেটোলজিস্টরা বেশ কিছু কৌশল প্রয়োগ করেন। বানরেরা চিতার ক্ষেত্রে কিরকম প্রতিক্রিয়া জানায় এটা বোঝার জন্য গবেষকগণ চিতার একটি মডেল তৈরি করেন, আবার ঈগলের বেলায় কেমন প্রতিক্রিয়া করে এটা বোঝার জন্য তারা ঈগলের ডাকের শব্দ রেকর্ড করে তারা বানরদেরকে তা শোনান। এগুলো শুনে বানরেরা যে বিভিন্ন আওয়াজের মাধ্যমে যে প্রতিক্রিয়া দেখায় স্লেংকার ও তার দল সেগুলোকে রেকর্ড করেন এবং পরবর্তীতে তার বিশ্লেষণ করেন। স্লেংকার জানান, “এরকম বিপদের অবস্থা তৈরি করেই অন্য যেকোন উপায়ের চেয়ে আরও ভালভাবে ও সহজ উপায়ে তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণা করা যায়”।

তথ্যসূত্র:

  1. http://link.springer.com/article/10.1007/s10988-014-9155-7
  2. http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/0003347277900781
  3. http://www.scientificamerican.com/article/monkey-see-monkey-speak-video/?WT.mc_id=SA_Facebook

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.