গ্যালাক্সি মার্জারদের ক্ষেত্রে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ খুব দ্রুত উৎপাদিত হয়

আর্টিস্ট এর আঁকা দুটো মার্জিং ব্ল্যাকহোল থেকে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ নিঃসরণের কল্পিত চিত্র

দুটো গ্যালাক্সির মার্জার বা একিভূতকরন নিঃসন্দেহে দেখার মত একটি দৃশ্য, কিন্তু একটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া। এটা একটি গ্যালাক্সির আকার সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করে দিতে পারে, কিন্তু এর জন্য এটা সময় নেয় প্রায় এক বিলিয়ন বছর। এটা আলাদা আলাদা নক্ষত্রগুলোকে কোনভাবে প্রভাবিত করে না বললেই চলে। এই গ্যালাক্সিদুটোর কেন্দ্রিয় ব্ল্যাকহোলদুটোকে অনেক টানা বা ঠেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যতক্ষণ না এগুলো একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করছে। আর নতুন এক গবেষণা অনুসারে এস্ট্রোনমিকাল টার্মস অনুযায়ী এই ঘটনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঘটে।

একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদের দল একটি গ্যালাক্সি মার্জারদের (একীভূত হচ্ছে এমন গ্যালাক্সি) ডিটেইলড সিমুলেশন তৈরি করেছে এবং এখান থেকে তারা আবিষ্কার করেছেন এই মার্জিং সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোল (গ্যালাক্সি যে ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘোরে) মার্জার গ্যালাক্সির একীভূতকরণ শুরু হবার মাত্র ১০ মিলিয়ন বছর পরেই গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ নিঃসরণ করা শুরু করে।

ইউনিভার্সিটি অব জুরিখের ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটেশনাল সায়েন্স এর লুসিও মেয়ার বলেন, “এই ফলাফলটি আশ্চর্যজনক। দুটো ব্ল্যাকহোলের মার্জিং এর ফলে মাত্র ১০ মিলিয়ন বছর পরেই গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ নিঃসরণ শুরু হয়ে গেছে, যে সময়টা আমাদের পূর্বের ধারণার চেয়েও ১০০ গুণ বেশি দ্রুত।”

এস্ট্রোফিজিকাল পেপার  জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটিতে গবেষকগণ এই সিমুলেশন এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন, যেটাকে সমাপ্ত করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। দলটি এজন্য দুটি ৩ বিলিয়ন বছর বয়সী গ্যালাক্সি প্রস্তুত করেন যেগুলো একে অপরের অনেক নিকটবর্তী ছিল এবং প্রতিটি গ্যালাক্সিতেই ১০০ মিলিয়ন সোলার ম্যাস বা সৌরভরের (সূর্যের চেয়ে ১০০ মিলিয়ন গুণ ভারি) সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোল ছিল।

গবেষকগণ যতটুকু পারা যায় বাস্তব সিমুলেশন তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কিভাবে ব্ল্যাকহোলগুলো চলাচল করবে এবং এতে গ্যালাক্সির প্রতিক্রিয়া কি হবে গবেষকগণ এর একটি রিপ্রেসেন্টেটিভ সিনারিও বা প্রতিনিধিত্বকারী দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম হন।

মেয়ার বলেন, “আমাদের হিসাবগুলো থেকে আর্লি বা প্রাথমিক ইউনিভার্সে সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোলদের মার্জিং রেটকে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। এটা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ খোঁজার জন্য eLISA (উচ্চারণ এলিসা) কে পরবর্তীতে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভকে আরও কার্যকরীভাবে খুঁজতে সাহায্য করবে”।

এলিসা হল একটি স্পেস গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজার্ভেটরি। ESA এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৪ সালে এটাকে লাঞ্চ করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজিকে এই বছরেই সফলতার সাথে টেস্ট করা হয়েছে। LIGO এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এই যন্ত্রটি কাজ করবে। LIGO গত বছরে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজার্ভ করেছিল। কিন্তু এই নতুন যন্ত্রটি হবে লিগোর চেয়েও অনেক বেশি সেন্সিটিভ। সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোলরা একে অপরের কাছাকাছি আসার সময় স্পাইরালিং ফেজ বা ঘুর্ণায়মান দশায় চলে যায়। এলিসা এই স্পাইরালিং ফেজে থাকা সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোলকেও ডিটেক্ট বা সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। এদের সনাক্ত করা জরুরি কেননা এই স্পাইরালিং সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোলগুলো ফাইনাল কলিশনের ফলে প্রস্তুত গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের তুলনায় কম ফ্রিকোয়েন্সির গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ তৈরি করতে পারে।

গ্যালাক্সিগুলো অপরিবর্তিত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু গ্যালাক্সিদের জীবনে বৃদ্ধি, পরিবর্তন এবং একে অপরের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। আর এই সংঘর্ষই গ্যালাক্সিদের বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব প্রায়ই বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://iopscience.iop.org/article/10.3847/0004-637X/828/2/73?fromSearchPage=true
  2. http://www.media.uzh.ch/en/Press-Releases/2016/Calculate-gravitational-waves.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.