বিলুপ্ত প্রজাতিদের পুনরুজ্জীবিতকরণ: সম্ভাবনা ও সমস্যা

ধীরে ধীরে ভবিষতের একটি বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে যে বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানীরা সক্ষম। এর মধ্যেই আমেরিকানরা প্রজাতির বিলুপ্তির বিরুদ্ধে কথা বলছে (ডিএক্সটিংকশন) আর তারা একটি ন্যাশনাল পার্ককে পরিবর্তিত করে ন্যাশনাল ডাইনোসর ক্লোন পার্ক তৈরি করার একটি জোড় দাবী জানাচ্ছে। সেই ন্যাশনাল ডাইনোসর ক্লোন পার্কে তারা সকল রকমের টাইরানিকাল পশুর উপস্থিতি চাচ্ছে।

তাত্ত্বিকভাবে এমন একটা কিছু করা সম্ভব। কিন্তু ফাংশনাল ইকোলজি  জার্নালে এক নব্য নৈতিক গবেষণা আমাদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি বিলুপ্তিরোধে প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণ করনে তারা মতামত দিয়েছেন , নন-এভিয়ান ডাইনোসরদের পুরুৎজীবিত না করতে। কারন অনেকেরই বিরক্তিকর মনে হতে পারে, অথবা অন্যভাবে বলা যায় আমাদের বাস্তবে এমন জুরাসিক পার্ক তৈরি করা উচিত হবে না।

গবেষণাটির সহ-লেখক বেনজামিন হালপার্ন (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান্টা বারবারার ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইকোলজিক্যাল এনালাইসিস এবং সিনথেসিস এর পরিচালক) বলেন, “ডিএক্সটিংকশন বা বিলুপ্ত প্রাণীদের ফিরিয়ে আনার ধারণাটি কতগুলো মৌলিক ও দার্শনিক প্রশ্নকে জাগ্রত করেছে। আর সেটা হল, আমরা কি একটা চিড়িয়াখানা তৈরি করতে চাচ্ছি নাকি প্রকৃতিকে পুনরায় তৈরি করতে যাচ্ছি? দুটোই যুক্তিসঙ্গত উত্তর। কিন্তু প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রজাতির পুনরুদ্ধার করা অনেক অনেক কঠিন প্রচেষ্টা। ইকোলজিকালি বা বাস্তুসংস্থানের ভিত্তিতে ডিএক্সটিংকশনকে আরো বেশী সফল কিভাবে করা যায় এবং কিভাবে “ইকো-জম্বি” তৈরি রোধ করা যায় আমরা তার নির্দেশনা দিচ্ছি।”

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই নির্দেশনাগুলো দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথমটা হল সেই সব বিলুপ্ত প্রাণীদের নিয়ে আসা উচিত হবে, যাদের জন্য  প্রয়োজনীয় বাস্তুসংস্থান এবং উপযুক্ত পরিবেশ এখন পৃথিবীতে আছে। দলটি ঘোষণা দেয় যে সম্প্রতি বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া প্রজাতি গুলোকেই পুনরুদ্ধার করা উচিত হবে, কিন্তু হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বছর আগে যে প্রজাতি গুলো বিলুপ্ত হয়ে পৃথিবী হতে মুছে গেছে সেগুলোকে উচিত হবে না। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিলুপ্তি প্রজাতি জন্য  সম্ভাব্য প্রকৃত বাস্তুতন্ত্র এবং আবাসস্থলগুলো বর্তমান পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র ও আবাসস্থলগুলোর সাথে অপেক্ষাকৃত একই হওয়ায় (হাইপোথেটিকলি বলা যায়) এই পরিবেশে তাদের পুনরায় অভিযোজিত করতে খুব কঠিন হবে না।

তাই এর অর্থ এই যে, আমরা রিইউনিয়ন দ্বীপের বড় বড় কচ্ছপ অথবা ক্রিস্টমাস দ্বীপের পিপিস্টেরিলা বাদুর আবার দেখতে পাব। দারুন! কিন্তু অবশ্যই পৃথিবী জুড়ে প্রাচীনকালে দাপটের সাথে রাজ করা টাইরানোসেরাস রেক্স এর প্রাণীগুলোর পুনরাবির্ভাবের সম্ভাবনা এই নিয়মের মাধ্যমে নাকচ হয়ে গেল।

দুর্ভাগ্যবশত এই বিষয়টা সঠিক। এধরণের বিশাল আকৃতির মাংশাসী প্রাণীরদের জন্য প্রকৃত পরিবেশ এখন আর নেই, তারা বর্তমানে থাকবে কোথায়? তথাপি যারা এ ধরণের কাজের উদ্দ্যেশেই একটা জাতীয় উদ্যান দেখতে চাইছে তারা সন্তুষ্ট হবেন না। তারপরও বলা যায় এটা এমনভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে যে সর্বোতম শিকারীরা চতুর্দিকে ঘুড়ে বেড়াতে পারে।

এই ২০১৬ সালে, পৃথিবীতে মাত্র ৩টাই নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোসেরোস আচ্ছে। এই ডি-এক্সটিংকশন কি তাদের আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পারবে?
এই ২০১৬ সালে, পৃথিবীতে মাত্র ৩টাই নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোসেরোস আচ্ছে। এই ডি-এক্সটিংকশন কি তাদের আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পারবে?

দ্বিতীয় পয়েন্টটি হচ্ছে পুনরুজ্জীবিত করা উচিত হবে তাদের ক্ষেত্রেই বাস্তুসংসংস্থানে যাদের ভূমিকাকে অন্য কোন প্রাণীর ভূমিকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায় না। অর্থাৎ যে সব বিলুপ্ত প্রাণীর বাস্তুসংস্থানগত প্রয়োজনীয়তা বর্তমান কোন প্রাণী মেটাতে পারে না, তাদেরকেই পুনরুজ্জীবিত করা উচিৎ।

কোন প্রাণীর সংখ্যা কমে গেলে বা তারা বিলুপ্ত হয়ে গেলে নতুন কোন লাইফফর্ম এসে তাদের জায়গা নিয়ে নেয় বলে আমরা দেখি। যেমনটা পূর্বের নন-এভিয়ান ডাইনোসরের বিলুপ্তির অভাব পূরণ করে দিয়েছিল সুবিধাবাদী ম্যামাল বা স্তন্যপায়ীরা। কিন্তু  তারপরও আমরা দেখি কিছু এক্সটিংকশন বা বিলুপ্তি বাস্তুসংস্থানের সত্যিই অনেক ক্ষতি করতে পারে। যেমন, যদি শার্ক বা হাঙ্গর বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে এই চূড়ান্ত পর্যায়ের খাদকের অভাবে সামুদ্রিক ফুড চেইন বা খাদ্য শিকল একেবারেই ভেঙ্গে পড়বে।

তৃতীয় পয়েন্টটিতে মন্তব্য করা হয়েছে, যেসব প্রজাতি গুলো কার্যকরভাবে প্রজনন করতে পারে এবং প্রচুর সংখ্যক বংশবৃদ্ধি করতে পারে তাদেরকেই ফিরিয়ে আনা উচিৎ। এই নির্দেশনা এজন্য যে, যাতে তারা বর্তমান পরিবেশের সাথে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারে এবং এরা শুধুমাত্র চিড়িয়াখানাতেই আবদ্ধ হয়ে না থেকে বনজ পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

কেউ কেউ যুক্তি দেন বর্তমান সংরক্ষণের প্রচেষ্টাগুলো যেমন পরিবেশ সুরক্ষা, প্রজনন কর্মসূচি, পরিবেশগত সচেতনতা, চোরাকারবারি উপর অভিযান, এই সব বিষয় গুলোয় মনোনিবেশ করা উচিত। তারা আরো যুক্তি দেখান যে ডিএক্সটিংকশন মানুষকে বিলুপ্তি প্রতিরোধ করায় কম উৎসাহিত করেছে।

যাই হোক, এই দলটি ঈঙ্গিত করছে প্রজাতির সংরক্ষণ এবং প্রজাতির পুনরুত্থান উভয়েই একই সাথে স্মার্ট উপায়ে করা যেতে পারে।

মনে হচ্ছে, এই স্যাবার টুথেড ক্যাটরাও পুনরুজ্জীবিত প্রজাতির তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে
মনে হচ্ছে, এই স্যাবার টুথেড ক্যাটরাও পুনরুজ্জীবিত প্রজাতির তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/1365-2435.12728/abstract?systemMessage=Wiley+Online+Library+will+be+unavailable+on+Saturday+3rd+September+2016+at+08.30+BST/+03:30+EDT/+15:30+SGT+for+5+hours+and+Sunday+4th+September+at+10:00+BST/+05:00+EST/+17:00+SGT+for+1+hour++for+essential+maintenance.+Apologies+for+the+inconvenience
  2. http://newsfeed.time.com/2013/03/14/finally-a-petition-to-convert-a-national-park-into-jurassic-park/
  3. http://www.news.ucsb.edu/2016/017081/mammoth-undertaking

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.