ভ্রমণ করুন বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সুখী দেশে

স্টকহোমের শর্টরগেট স্কয়ারের আউটডোর ক্যাফেগুলো

একজন ভ্রমণ পিপাসু হলে আপনি সাধারণত ছুটি কাটাতে চোখ জুড়ানো ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়া বেশ বিরাজ করে এমন দেশ গুলোতে যেতে চাইবেন। এসব কিছুর পর আপনি অবশ্যই ভাল সেবা ও বন্ধুত্বপূর্ণ লোকজন খুজবেন। আজকের এই লেখাটি ভ্রমণ পিপাসু তো অবশ্যই এবং বিশ্বের টপ ১০ টি দেশ ২০১৬ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুসারে জানতেই।

প্রতিবছর জাতিসংঘ বিশ্বের নাগরিকদের জীবনমান পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ করে তথ্য বিশ্লেষণ করে । এই ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট শুরু হয় ২০১২ সাল হতে এবং তখন থেকেই লিস্টের শীর্ষে ১৩ টি দেশ তাদের স্থান ধরে রেখেছে প্রতিবছরই। বিশ্বের এই দেশ গুলো কী কারনে হ্যাপিয়েস্ট? সুশাসন, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং উচ্চ জীবন মান এসব কিছুর উপর নির্ভর করে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়।

কোন একটি দেশের ভিজিটর বা পরিদর্শকদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এর ফলাফল নেওয়া হয়নি। অবশ্য এধরণের রিপোর্ট ভ্রমণকারীদের জন্য সর্বাত্মক মান নির্নয় করায় সাহায্য করে। “জনগণের মধ্যে আস্থা ও মহত্বতা এই ১০ টি দেশকে সবার উপরে রেখেছে” বলেছেন John Helliwell যিনি এই রিপোর্টের একজন কট্রিবিউটর। “লোকজন বেশ বন্ধুসুলভ, তারা যথাসম্ভব ভাল কাস্টমার সেবাদানকারী, এবং আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দেশ গুলো চমৎকার ভ্রমণের জন্য”।

নিম্নের হ্যাপি ভ্রমণের জন্য ১০ টি টপ দেশঃ

সুইডেন-১০

সুইডেন ৫টা নরডিক দেশের মধ্যে একটা এবং বারবারই হ্যাপিনেস রিপোর্টে শীর্ষের কাছকাছি থাকে। বিশ্বের এই এলাকার মধ্যে দেশটিতে সন্তুষ্টির মাত্রা বেশ উচু হিসেবেই পাওয়া গেছে। কি ধরণের অভিজ্ঞতা এই দেশটিকে সুখীদেশ বানিয়েছে এমনটা মনে হলে আপনাকে সাধারণ একটা কফির দোকানে যেতে হবে, তাহলেই বুঝতে পারবেন। সুইডেন হচ্ছে বিশ্বের ৩ টি টপ কফি ভোক্তা দেশের মধ্যে একটা । সুইডিসদের ঐতিহ্য ‘ফিকা’ তাদের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবকে বেশ মজবুত করেছে। ফিকা (Fika)কে অনুবাদ করে বলতে গেলে বলা যায় “ব্রেক টাইম” বা অবসর সময় যখন লোকজন কফির দোকানে দেখা করে তারা একের পর এক কফি পান করে, সংবাদ নিয়ে আলোচনা করে, এবং প্যাস্ট্রি খায়। সম্ভব হলে চেষ্টা করুন স্টকহোমে Vete-Katten ঐতিহাসিক স্থানে ফিকায় অংশগ্রহণ করতে, এটা অবশ্য স্থানীয় কফি পানের জায়গা যেটা ১৯২৮ সালে স্থাপিত হয়।

অস্ট্রেলিয়া-০৯

আয়তনের দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের ৬ষ্ঠতম বৃহত্তম দেশ। এর জনসংখ্যা খুবই কম, নাগরিক জীবনযাত্রার মান অনেক উচ্চ, এবং অত্যন্ত সামাজিক। অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় বার্বিকিউ সকলকে একত্র করে; জাতীয় উদ্যান, বাইরে ঘুরাফেরা জায়গায়, এবং অন্যান্য জায়গায় বিনামূল্য বা কয়েন দিয়ে বার্বিকিউ পাওয়া যায়। যেসব ভ্রমণকারীদের অস্ট্রেলিয়ান বন্ধুবান্ধব নেই তাদের ঘুরানোর জন্য তারা XXXX Brewary এবং BBQ তে অংশ গ্রহণ করতে পারে স্থানীয় Brewaries দেখার জন্য এবং একই সাথে বিভিন্ন রকম মাংশ এবং সী-ফুড খাবারের স্বাদ নিতে পারে। অথবা BBQ Sunset Cruise-এ করে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার হ্রদ Kununurraতে খেতে খেতে ঘুরতে পারে।

নিউজিল্যান্ড-০৮

নিউজিল্যান্ড হচ্ছে একটা দ্বীপ দেশ। ৮০০ বছর আগে মানুষ এটা দখল করে। ব্লু-মাউনটেইন থেকে সাউথ আইলেন্ডের ওয়াইল্ড পেঙ্গুইন পর্যন্ত অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে দেখার মতো, এখানে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহি পরিবেশের স্বর্গীয় সমারোহ দেখতে পাবেন। বর্তমানে এখানে জনসংখ্যা বেশ কম এবং এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী জীববৈচিত্রময় দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। নিউজিল্যান্ডবাসীরা তাদের স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র নিয়ে বেশ গর্ব করে এবং সেটা রক্ষা করার জন্য প্রচুর পরিশ্রমও করে। আপনি ভ্রমণে গেলে অবশ্যই আগ্নেয়গিরী, প্রাচীন মাউরি সাইটস এবং Tongariro and Whanaguni জাতীয় উদ্যানে বেসিন বা Craters গুলো দেখতে ভুলবেন না।

নেদারল্যান্ড-০৭

নেদারল্যান্ডের আমস্টার্ডামে সাইকেল ভ্রমণ
নেদারল্যান্ডের আমস্টার্ডামে সাইকেল ভ্রমণ

নেদারল্যান্ডের নাগরিকদের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শারীরিক পরিশ্রম করে। নিরাপদ ভ্রমনের জন্য দেশটির ২০ হাজার মেইল বাই-সাইকেল চালানোর লেন আছে, এবং রাজধানী আমস্টার্ডাম কে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশী বাইসাইকেল বান্ধব শহর। যদি পছন্দ হয় বা ইচ্ছা জাগে সাইকেল ভাড়া নিয়ে আপনি ভ্রমণ করতে পারেন। আমস্টার্ডামের ম্যাপ নিন স্বাধীনভাবে এই শহরটি ঘুরে বেড়ান অথবা কোন স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিন।

কানাডা-০৬

কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ এবং বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, উত্তরদিকে সুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এই দেশটি। বিস্তৃত ও সাস্কৃতিকভাবে বৈচিত্রময় দেশটিতে প্রচুর ঘুরেফেরার জায়গায় আছে। উত্তর-পশ্চিমের অংশে বরাবর পুরানো ট্রান্স-কানাডা হাইওয়ে, ভ্রমনকারীরা শীতকালের ডগ-শ্লেসের সময় মুশিং কলা শিখতে পারে। হাইকিং করতে চাইলে রকি পর্বতমালার Banff ন্যাশনাল পার্ক বা অন্যান্য পার্ক গুলো হাইক করতে পারেন।

ফিনল্যান্ড-০৫

উদ্বেগ দূর করতে আপনি ঐতিহ্যবাহি স্টিম বার্থ ‘ফিনিস সুনা’ ব্যবহার করতে পারেন। এটা ফিনিস জাতির সম্মানজন প্রথা। ৫.২ মিলিয়ন লোকের সারা সারা দেশে ৩.৩ মিলিয়ন সুনা আছে। হৃদের পাশের বাড়ি গুলোয়, অফিস ভবনে এমনকি তাদের পার্লামেন্টেও সুনা আছে।

নরওয়ে-০৪

নরওয়ের খাড়িতে পাখি দেখার দৃশ্য
নরওয়ের খাড়িতে পাখি দেখার দৃশ্য

নরওয়ে পৃথিবীর গর্জিয়াস ল্যান্ডস্কেপের জন্য এর রেট সবার উপরে। আউটডোরের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক এই দেশটি। হাইকিং করার ইছা থাকলে চলে যান নরওয়ের সমুদ্রের খাড়ি(Fjord) গুলোয়। গ্রীষ্মের মাস গুলোয় স্কালা(Skala)পর্বতে চড়তে পারেন। স্কালা এই দেশটির সবচেয়ে উচু পর্বতমালা। স্থানীয় পর্বতমালা এবং হিমবাহ উপভোগ করতে চাইলে এর জুড়ি নেই।

আইসল্যান্ড-০৩

২০০৮এর পর অর্থনৈতিক মন্দার পরও যখন দেখা গেল আইসল্যান্ড ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে শীর্ষে তখন আইসল্যান্ডের অনেকেই অবাক হয়েছিল। Helliwell এর মতে, অর্থনৈতিক মন্দা দেশের মানুষকে একত্র করেছে এবং পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার খুলতে সাহায্য করেছে। এখন আইসল্যান্ড এয়ার ইউরোপের জন্য সস্তা ভ্রমণের অফার দিচ্ছে যারা রাজধানী শহর রিকজাভিকে(Reykjavik) অবসর সময় কাটাতে চান তাদের সুবিধার্থে। ভ্রমণকারীরা এখানে বড় বড় মার্কেট পাবে, বাইরে সুইমিং পুল পাবে এবং সহজে জাতীয় উদ্যান গুলো যায়ায়াত করতে পারবে। হাতে সময় থাকলে লং ড্রাইভে আগ্নেয়গিরী, সী-বিচ সহ এখানকার ল্যান্ডস্কেপ দেখতে পারেন।

সুইজার্ল্যান্ড-০২

২০১৫ সালের রেংকিংএ বিশ্বের হ্যাপিয়েস্ট দেশ হিসেবে উপরের দিকে ছিল সুইজার্ল্যান্ড। সুইস রা এক সমৃদ্ধ জাতি, তাদের অপূর্ব স্কী করার ঢাল এবং উচ্চমানের চকলেট সমৃদ্ধ বলে পরিচিত এই সুইজার্ল্যান্ড। সুইজার্ল্যান্ডের বাইরে ঘোরার জায়গা গুলো অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এবং এর নাগরিকদের সুস্থ জীবনধারা জন্য এগুলো আদর্শ জায়গা। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলায় সুইজার্ল্যান্ডে স্থুলুকায়ের রেট সবচেয়ে কম। ক্যানিয়ন, কায়াকিং করে আপনি এই দেশের বন্য অঞ্চল গুলো আবিষ্কার করতে পারেন, পারেন প্যারাগ্লাইডিং করে ইন্টারল্যাকেনে দেশের সুবিশাল পার্বত্যাঞ্চল দেখতে।

ডেনমার্ক-০১

01-happiest-places-earth.adapt.1190.1
ডেনিশরা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বেশ স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে।

ডেনমার্ক এই প্রথম নয় যে সুখীদেশের তালিকায় প্রথম। ডেনমার্ক কর্তৃপক্ষ প্রচুর সরকারী সেবা বিনামূল্যে দিয়ে থাকে যেমন স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষা। এই দেশের নাগরিকদের আছে সামাজিক জীবন ও অসম্প্রদায়গত মানসিকতা যা তাদের অহংকার বটে। আপনি রয়াল কোপেনহেগেন খ্রিস্টমাস টেবিল এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাদের স্বাচ্ছন্দ বা hygge সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করতে পারেন এই সব এক্সিবিশনে অথবা সাংস্কৃতিক পরিচয় পাওয়ার জন্য বন্ধু ও পরিবারের সানিদ্ধ্য খেতে খেতে অলসতা উপভোগ করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: 

http://www.nationalgeographic.com/travel/top-10/2016-worlds-happiest-countries/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.