ক্রিসপার জিন এডিটিং এর সাহায্যে উদ্ঘাটিত হল আঙ্গুলের বিবর্তনের রহস্য

বামদিকের ইঁদুরের হাত ও ডানদিকের জেব্রাফিশের পাখনায় ট্যাগড জেনেটিক মার্কার এর সাহায্যে দেখানো হচ্ছে যে ইঁদুরের আঙ্গুল এবং জেব্রাফিশের পাখনা তৈরির জন্য একই জিন দায়ী

প্রাণীদের বিবর্তনের একটি পর্যায়ে ফিন বা পাখনাযুক্ত প্রাণীরা আঙ্গুলযুক্ত প্রাণীতে বিবর্তিত হয়। আর প্রাণীদের এই বিবর্তনই তাদেরকে জল থেকে ডাঙ্গায় নিয়ে আসে। এই ব্যাপারটিকে এতদিন ধরে ফসিলের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হত, কিন্তু সেলুলার বা কোষীয় ব্যাখ্যার দ্বারা এই ঘটনা কিভাবে, কখন ঘটেছিল এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় নি দীর্ঘদিন ধরে।

সম্প্রতি নেচার  জার্নালের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব কোষ মাছেদের ক্ষেত্রে ফিন রে বা পাখনা তৈরি করে সেগুলো যে কোষগুলো চতুষ্পদ জন্তুগুলোর আঙ্গুল তৈরি করে তাদের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, এই ফিন বা পাখনাগুলোর অগ্রভাগে যে ছোট নমনীয় হাড় দেখা যায়, আমাদের একোয়াটিক এনসেস্টর বা জলজ পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে সেগুলোই ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে আঙ্গুলে পরিণত হয়েছিল যা আমরা এখন সারা পৃথিবী জুড়ে দেখে থাকি।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর অর্গানিজমাল বায়োলজি এবং এনাটমির প্রফেসর এবং গবেষণাটির কোঅর্ডিনেটিং অথর নেইল শুবিন বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষকগণ ভেবে আসছিলেন যে ফিন রে বা পাখনাগুলোর সাথে আঙ্গুলের কোনধরণের সম্পর্ক নেই। কারণ এদের একটি যেখানে প্রাথমিকভাবে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি থেকে তৈরি হয় সেখানে আরেকটি গঠিত হয় সরল জোযক কলা বা কানেকটিভ টিস্যু দিয়ে। কিন্তু আমাদের এই নতুন গবেষণাটির ফলাফল আমাদেরকে দেখাচ্ছে যে আমাদের নতুন করে ভাবার জন্য অনেক কিছুই আছে”।

এই আবিষ্কারটি করার জন্য গবেষকগণ জেব্রাফিশ নামের একটি জলজ প্রাণী নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই প্রাণীটির রয়েছে ট্যিসু রিজেনারেট বা পুনরুৎপাদন করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। আর এর ফলে তারা খুব তাড়াতাড়ি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তো সাড়িয়ে ফেলতে পারেই, সেই সাথে দরকার পড়লে সাড়িয়ে ফেলতে পারে তাদের স্পাইনাল কর্ডকেও!  এরা ছোট, এদেরকে সংরক্ষণ করা ও পালন করার খরচ অনেক কম, এরা বৃদ্ধি পায়ও খুব তাড়াতাড়ি। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এদের সম্পূর্ণ জিনোমই বিজ্ঞানীদের জানা। আর সেজন্যই ডেভেলপমেন্টার বায়োলজি স্টাডিগুলোতে এরা হল মডেল অর্গানিজম।

জেব্রাফিশ
জেব্রাফিশ

গবেষকগণ তাদের ক্ষেত্রে CRISPR/Cas বা ক্রিসপার জিন এডিটিং টেকনিক ব্যবহার করে এদের অঙ্গ বা লিম্ব তৈরি করার জিনগুলোকে ডিলিট করে দেন বা মুছে দেন। আর এরপর তাদেরকে সেই কিছু অংশ ডিলিট করে দেয়া জিন নিয়েই ব্রিড বা পালন করা চলতে থাকে। এরপর কয়েক বছর ধরে পালন করে প্রাণীদের ইভোল্যুশনারি লিনিয়েজ বা বিবর্তনগত বংশধারাকে নকল করা হয়। আর এভাবে ফার্টিলাইজেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ পাখনা তৈরি পর্যন্ত এই জেব্রাফিশগুলোর অঙ্গ তৈরিতে ব্যবহৃত কোষগুলোকে ট্র্যাক করে এদের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা হয়।

তারা খুঁজে পান যে, এই জিনগুলোকে মুছে ফেলার ফলে তাদের ফিন রে বা পাখনাগুলো আকারে অনেকটাই ছোট এবং সরল হয়ে এসেছে। অতঃপর সিটিস্ক্যান করে দেখা যায় এই জেব্রাফিশগুলোর শরীরে কার্টিলেজ ফিন তৈরি করা ছোট ছোট হাড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সেই কার্টিলেজ ডেভেলপমেন্ট যা আঙ্গুলের বিবর্তন এর দিকে প্রাণীদেরকে নিয়ে যায়।

এই জেব্রাফিশ জিন এক্সপেরিমেন্টটির মাধ্যমে বিবর্তনের একটি রহস্যের সমাধান হল। জানা গেল কিভাবে, জলজ প্রাণীরা ডাঙ্গায় উঠে আসার সময় ফিন বা পাখনা না তৈরি করে সেখান থেকে সুইচ করে আঙ্গুল তৈরি করা শুরু করে। আর চূড়ান্তভাবে এটা জানা যায় যে কিভাবে আমাদের হাত, পা, আঙ্গুল সবই মাছেদের পাখনার সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত, যা আমরা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারি নি।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.nature.com/nature/journal/vaop/ncurrent/full/nature19322.html
  2. https://sciencelife.uchospitals.edu/2016/08/17/new-techniques-boost-understanding-of-how-fish-fins-became-fingers/
  3. http://www.theatlantic.com/science/archive/2016/08/from-fins-to-feet/496226/

 

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.