অক্টোবট: প্রথম পূর্ণাঙ্গ নরম দেহের রোবট

অক্টোবট

রোবটিক্সের জগতে নরম কিছু মনে হয় অবাক করার মত একটা ব্যাপার। কারণ একটা রোবট নরম হতে পারে তা যেন কেউ ভাবতেই পারে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়াররা এখন কোনরকম শক্ত উপাদান না ব্যবহার করেই মেশিন তৈরি করার উপায় খুঁজছেন, যা নিজের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রার বিকৃতি ঘটাতে পারবে এবং ছোট জায়গার মধ্যে নিজেকে সংকুচিত করেও রাখতে পারবে।

অক্টোপাসরা হল এরকম রোবট তৈরির জন্য সবচেয়ে সঠিক প্রাকৃতিক ব্লুপ্রিন্ট। বিভিন্ন বাঁধা ও আঘাতের সময় তাদের দেহের আকারের রূপান্তর এবং নিজেকে টেনে প্রসারিত করার ক্ষমতাকে ধন্যবাদ। অক্টোপাসের এই গুণগুলোর কথা মাথায় রেখে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী “অক্টোবট” নামের একটি রোবট তৈরি করেছেন। আর এই রোবটটি পেয়েছে বিশ্বের প্রথম নরমদেহী রোবটের খেতাব।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নরম রোবটগুলোতে অন্তত কিছু পরিমাণে হলেও শক্ত উপাদান ছিল যেমন ফুয়েল কনটেইনার, ক্যাবল অথবার অন্যান্য পাওয়ার সোর্স। কিন্তু নেচার  জার্নালে অক্টোবটের নির্মাতারা ব্যাখ্যা করেন কিভাবে তারা এই সিলিকন অক্টোপাসের দেহ থ্রিডি প্রিন্টিং করে এবং অন বোর্ড ফুলেল রিজারভয়ের এবং ক্যাটালাইটিক রিয়েকশন চেম্বার তৈরির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করেছেন। এই অন বোর্ড ফুয়েল রিজারভয়েরস এবং রিয়েকশন চেম্বারগুলো অক্টোপাসের টেন্টাকেলদের সাহায্যে হাইড্রোজেন বেজড ইংক জমা করে।

এই ইংকে প্লাটিনাম পার্টিকেল থাকে যেগুলো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন ও পানির বাষ্প নিঃসরণ করে। এর ফলে রোবটের বাহুগুলোর মধ্যে সংকোচন, প্রসারণ ঘটে। টেন্টাকেলদের সংকোচন ও প্রসারণকে নিশ্চিত করার জন্য এই রোবটের ভেতরে থাকা ভালভ ও সুইচের সিরিজ এর গ্যাসের মুভমেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখনও এই রোবটের নির্মাতাগণ রোবটটির যাতায়াতের দিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেন নি। করেননি কিন্তু তাদের কাছে এই রোবটের চলাচলের দিক নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতির ব্যাপারে একটা পরিকল্পনা আছে।

অক্টোবটের এই মডেলটির উচ্চতা দুই সেন্টিমিটারের চেয়ে কম এবং এর আকার মোটামুটি মানুষের হাতের তালুর মত। এই মডেলটি তার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সাপ্লাই শেষ হয়ে যাবার আগে চার থেকে আট মিনিট চলাচল করতে পারে। যদিও রিফুয়েল করার সময়ও তাদেরকে সচল রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের।

পুরোপুরি পারফেক্ট হয়ে গেলে, এই রোবটটির প্রচুর পরিমাণে বাস্তব প্রয়োগ থাকবে। এটার পথ ধরে উচ্চ মাত্রার কর্মতৎপর রোবট তৈরি করা গেলে সেগুলো মিলিটারি সারভেইলেন্স এর প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.nature.com/nature/journal/v536/n7617/full/nature19100.html
  2. http://www.nature.com/nature/journal/v521/n7553/full/nature14543.html

1 Comment

  1. প্রকৃতির দিকে তাকালে আমরা অনেক কিছু করার অনুপ্রেরণা পাই। প্রকৃতিতে এমন একটা নরমদেহী ও ইচ্ছামতো সেইপ দিতে পারে এমন প্রাণী না থাকলে হয়তো প্রযুক্তিবিদদের মাথায় আসতোই না এমন একটা রোবট বানানো যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.