নতুন আবিষ্কৃত প্রাচীন রোমান ট্যাবলেটগুলো আমাদের দিচ্ছে রোমান যুগের লন্ডন সম্পর্কে অনেক অজানা রহস্যের সন্ধান

Roman-Writing-Tablets.jpg

সম্প্রতি বেশ কিছু প্রাচীন ব্রিটিশ রোমান লিপির ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই উদ্ধারকৃত ট্যাবলেটগুলো আমাদেরকে প্রাচীন ব্রিটিশ রোমান যুগের সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে সক্ষম।

মিউজিয়াম অব লন্ডন আর্কিওলজি বা MOLA (Museum of London Archaeology) থেকে দেয়া একটি প্রেস রিলিজে বলা হয়, “রোমান লন্ডনে যারা বাস করত, কাজ করত, রোমান লন্ডনের সাথে যারা বাণিজ্যে জড়িত ছিল তাদের দ্বারা এই ট্যাবলেটগুলোর লেখা থেকে এই শহরের বিভিন্ন নাম, ঘটনা, কার্য, এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত নতুন তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এদের একটি ট্যাবলেটে লন্ডনের সবচেয়ে প্রাচীন রেফারেন্স পাওয়া গেছে যা লন্ডনের এপর্যন্ত জানা সবচেয়ে প্রাচীন রেফারেন্স টাকিটাসের রেফারেন্সেরও ৫০ বছর পূর্বের”।

আজকের দিনে আমরা যেমন কাগজ ব্যবহার করি, রোমান যুগে তেমনি গোটা রোমান সাম্রাজ্য জুড়েই ট্যাবলেট ব্যবহার করা হত। যখন মিডিয়া কোম্পানি ব্লুমবার্গ তাদের ইউরোপিয়ান হেডকোয়ার্টারটি নির্মান করছিল তখন এই ট্যাবলেটগুলোকে উদ্ধার করা হয়। মোট ৪০৫টি ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে এই উদ্ধারকার্যে। এগুলোর আগে লন্ডন সংক্রান্ত মাত্র ১৯টি ডিসিফারেবল বা পাঠোদ্ধারসম্ভব ট্যাবলেট ছিল। নতুন এই ট্যাবলেটগুলো আবিষ্কারের পর ৮০টিরও বেশি নতুন ডকুমেন্ট এর পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। MOLA থেকে বলা হয়, “এই পাঠোদ্ধারকৃত ডকুমেন্টগুলো ব্রিটেইনে রোমান শাসনের প্রথম দশকের অতিমাত্রায় বিরল এবং ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে”।

এই ট্যাবলেটগুলো থেকে উদ্ধারকৃত তথ্যগুলোর মধ্যে জুলিয়াস ক্লাসিকাস এর এভিডেন্স পাওয়া গেছে যেখান থেকে বাটাভিয়ান বিদ্রোহ সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া যায়। প্রথম দিকে রোমানরা লন্ডন শহর তৈরি করলে তিনি লন্ডনে নারভিয়ানদের ষষ্ঠ কোহর্টের প্রিফেক্ট ছিলেন। রোমে কোহর্ট বলতে একটি মিলিটারি ইউনিটকে বোঝায় যেখানে ৩০০ থেকে ৬০০ জন সৈন্য থাকে এবং এটি একটি লেজিয়নের দশ ভাগের একভাগ। বাটাভিয়া বর্তমান নেদারল্যান্ডে অবস্থিত। বাটাভিয়ান বিদ্রোহ হয় ৬৯ এবং ৭০ খ্রিষ্টপূর্বে। এই বিদ্রোহে কিছু রোমান সৈন্য বিদ্রোহীদের দলে চলে গিয়েছিল।

গবেষকদের একটি দল একটি ট্যাবলেটকে ডেট করে দেখেছে তা ৪৩ এবং ৫৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই রোমানরা ব্রিটেইন জয় করে। আরেকটিতে লন্ডনের প্রথম রেফারেন্স পাওয়া যায়। ডেটিং করে দেখা যায় এটা ৬৫ থেকে ৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছিল। ডকুমেন্টগুলোতে ভেরুলামিয়াম থেকে লন্ডনে ২০ লোডের একটি প্রোভিশন বা বিধান নিয়ে আসার একটি চুক্তি পাওয়া গেছে।  এটা ছিল ৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর তারিখে, রোমানদের বিরুদ্ধে বোউডিকার বিদ্রোহের পর। এই বিদ্রোহে বোউডিকা এবং তার সেনাদল লন্ডন পুড়িয়ে দিয়েছিল। এই ট্যাবলেটটিই একটি আমাদের দেখাচ্ছে কত তাড়াতাড়ি রোমানরা লন্ডনকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল।

আনুমাণিক ৬০ খ্রিষ্টাব্দে আইসিনাই ক্ল্যানের (Iceni)  কুইন বোউডিকা লন্ডন আক্রমণ করে। আইসিনাই ছিল একটি কেল্টিক ক্ল্যান (Celtic)। গবেষকগণ ঘোষণা করেন, বোউডিকার বিদ্রোহের জবাবে রোমানরা লন্ডনে একটি দুর্গ গড়ে তোলে যার পরিখা ছিল ১০ ফুট গভীর, দেয়াল ছিল ১০ ফুট উঁচু এবং একটি প্লাটফর্ম ছিল যা দিয়ে আক্রমণকে প্রতিহত করা যায়।

আরেকটি ডকুমেন্টকে ডেসিফার করা হয় যেটাতে বিভিন্ন পেশার প্রায় ১০০ জন লোকের নাম লেখা আছে। এই পেশাগুলোর মধ্যে বিচারক, মদ্য প্রস্তুতকারী, পিপানির্মাতা, সৈন্য, দাস এবং স্বাধীন মানুষ ছিল। এই নামগুলো সম্ভবত রাইনল্যান্ড এবং গলের লোকজনের নাম ছিল।  লন্ডনের জনগণের বেশিরভাগ অংশই সৈন্য এবং ব্যাবসায়ী ছিল। একটি ট্যাবলেট পাওয়া যায় যেটায় একজন মানুষ বিভিন্ন অক্ষর এবং সংখ্যা লেখার অনুশীলন করেছিল। এটা ব্রিটেইনে প্রথম স্কুলিং এর একটি প্রমাণ। ব্রিটেইনের সর্বপ্রথম হস্তলিখিত ডকুমেন্টটি এই টেক্সটগুলোর মধ্যে পাওয়া গেছে। সেটা ছিল একটি ফাইনানশিয়াল ডকুমেন্ট যা ৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারিতে লেখা হয়।

ট্যাবলেটগুলো টিকে আছে কারণ এগুলো ওয়ালব্রুক নদীর ভেজা কাঁদার নিচে ছিল। ওয়ালব্রুক নদীটি রোমানদের যুগে মাটির উপরে ছিল কিন্তু এখন সেটি সমাধিস্থ। কাদামাটি অক্সিজেনকে শুষে নিয়ে ট্যাবলেটগুলোকে ক্ষয় করার হাত থেকে রক্ষা করেছে। এছাড়াও ট্যাবলেটগুলো ভাল অবস্থায় ছিল। ট্যাবলেটগুলো লেখার আগে মোম দিয়ে আবৃত করা হত। এরপর সেই মোমের উপরে স্টাইলাস দিয়ে লেখা হত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই মোম ভেদ করে স্টাইলাস কাঠেও দাগ কাটত, যেখান থেকে এখন ট্যাবলেটের কাঠের উপর লেখা ডেসিফার করা হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঠের উপরে কয়েকবার করে লেখা হত। এক্ষেত্রে লেখাগুলোকে ডিকোড করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।  রজার টমলিন নামক একজন ক্লাসিসিস্ট এবং কারসিভ লাতিন এক্সপার্টকে ট্যাবলেটগুলোর লেখাকে ডেসিফার করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি রেকিং লাইটে তোলা ফটোগ্রাফ এবং মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ট্যবলেটগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। সেই সাথে রোমান যুগের ব্রিটেইন সম্পর্কে তার অনেক এনসাইক্লোপেডিক জ্ঞান আছে এবং বিভিন্ন অপূর্ণ ধ্বংসাবশেষ থেকে রোমান লিপিকে রিকনস্ট্রাক্ট করার অভিজ্ঞতাও তার আছে বলে MOLA থেকে জানানো হয়।

নিউ ব্লুমবার্গ বিল্ডিংএ একটি এক্সিবিশন স্পেস থাকবে যেখানে এই খননকার্য দ্বারা প্রাপ্ত ৭০০টি আর্টিফ্যাক্ট থাকবে। এগুলোর মধ্যে প্রাচীন ব্রিটেইনের প্রাথমিক লিখিত ট্যাবলেটগুলোও থাকবে। এটি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের শরতে খোলা হবে।

http://www.mola.org.uk/blog/archaeological-research-britain%E2%80%99s-oldest-hand-written-documents-released

– ভেলোসিটি হেড

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.