বেপরোয়া মদ্যপানের জন্য দায়ী একটি জিন মিউটেশন

drunk

অনেকেই আছেন যারা অল্প মদ খেয়েই অনেক মাতাল হয়ে পড়েন ও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কখনও তাদের আচরণ অন্যদের হাসির কারণ হয় আবার কখনও মোটেই অতটা সুখদায়ক হয় না। যাই হোক, নতুন একটা গবেষণার কারণে হয়তো তারা এরকম আচরণের জন্য একটা এক্সকিউজ দাঁড় করাতে পারবেন।

University of Helsinki এর রিসার্চারগণ সেরেটনিন ২বি রিসেপ্টরের জন্য দায়ী জিনের এক্সপ্রেশনকে এফেক্ট করা মিউটেশনের সাথে সামান্য পরিমাণ মদ্যপানের ফলে জাজমেন্ট বা কোন কিছু বিচারের এরর বা ভূলের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।  এই জাজমেন্টের ভূল ছাড়াও অনেক কিছু যেমন মারামারিতে জড়ানো, সেক্স ইমপালসিভ হওয়া এবং মাতাল অবস্থায় ড্রাইভিং করাও এর সাথে সম্পর্কিত। এই সব কিছু হয় একটি জিনের মিউটেশনের ফলে যা সেই জিনের রিড এবং এক্সপ্রেশনের আগে একটি স্টপ সিগনাল দিয়ে তার এক্সপ্রেশনকে বন্ধ করে দেয়। আর তার ফলে সেই ব্যক্তি অনেক কম পরিমাণে সেরোটোনিন ২বি রিসেপ্টর তৈরি করেন।

এই সে্রোটোনিন ২বি রিসেপ্টর মানব দেহের ১৪টি সেরোটোনিন রিসেপ্টরের মধ্যে একটি। যদিও এটার ফাংশন সম্পর্কে খুব একটা বেশি কিছু জানা যায় নি,  Translational Psychiatry জার্নালে প্রকাশিত অথর Dr. Roope Tikkanen এর এই গবেষণাটি আমাদেরকে ইম্পালসিভ বিহ্যাভিওরের রেগুলেশন এর সাথে সেরোটনিন ২বি রিসেপ্টরের যুক্ত থাকা সম্পর্কে তথ্য দেয়।

মদ্যপানের ফলে বেপরোয়া আচরণ ছাড়াও এই গবেষণাটির ডেটাগুলো নির্দেশ করে, এই মিউটেশনের বাহকেরা তাদের অন্যান্য সময়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি মুড চেঞ্জ করে ও ডিপ্রেসিভ বা বিমর্ষ হবার সিম্পটম দেখায়। আরও দেখা গেছে, এই মিউটেশন ভায়োলেন্ট ওফেন্ডারদের মধ্যে চারগুণ বেশি থাকে। এই সব কিছুই আমাদেরকে সেরোটোনিন ২বি রিসেপ্টর এর কাজ এবং মুড রেগুলেশন ও ডিসিশন মেকিং এ এর প্রভাব সম্পর্কে তথ্য দেয়।

এই আবিষ্কারটি এখনকার সেরোটনিন সম্পর্কিত থিওরির উন্নয়নে অবদান রাখবে। পূর্বের গবেষণাগুলোতে পাওয়া গিয়েছিল মোরাল জাজমেন্ট এবং অন্যদের ক্ষতি করার আগ্রহের জন্য সেরোটোনিন দায়ী। অন্যদিকে Cambridge University এর কয়েকটি ভিন্ন গবেষণা দেখিয়েছে কিভাবে সেরোটোনিন লেভেল রাগের ক্ষেত্রে ব্রেইনের রেসপন্সকে প্রভাবিত করে।

ডেটা কালেক্ট করার জন্য গবেষকগণ ৭৭৫ জন ফিনিশ পিপলের ইন্টারভিউ নেন তাদের মদ্যপ ও অম্পদ্যপ অবস্থায় ইম্পালসিভিটি ও এগ্রেশন সম্পর্কে জানতে। দেখা যায় HTR2B Q20* নামক মিউটেশনটি মদ্যপান সম্পর্কিত রিস্ক বিহ্যাভিওরকে প্রেডিক্ট করে। অন্য কথায় এটি তথাকথিত ‘চারচিল জিন’ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। (চারচিল জিন হল সেই জিন যার ফলে মানুষ মদ্যপ অবস্থায় সবচেয়ে ভাল কাজগুলো করতে পারে। এর নাম করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট এর নামানুসারে যিনি বেশিরভাগ সময়ে ইনটক্সিকেটেড থাকা অবস্থায় হিটলারের জার্মানিকে পরাজিত করেন।)

যাই হোক, এক্ষেত্রেও একটা কথা থেকে যাচ্ছে। এমনও হতে পারে যে এই মিউটেশনটি কেবল ফিনল্যান্ডের মানুষের ট্রেইট। ফিনল্যান্ড একটি নরডিক কান্ট্রি। বাকি দেশগুলো থেকে এটা এরা অনেকাংশেই আইসোলেটেড বলা যায়। ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় নরডিকদের মধ্যে জেনেটিক ভেরিয়েশন আছে যা অন্যান্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায় নি। হতে পারে এই বিশেষ মিউটেশনটি কেবল নরডিকদের মধ্যেই হয়। আর তাই হয়তো নর্ডিক নন, এরকম মানুষও এখনও নিজের ব্যাবহারের জন্য মিউটেশনকে দায়ী করতে পারেন না। এই মিউটেশন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে কিনা এটা জানার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

http://dx.doi.org/10.1038/TP.2015.170

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.