রত্নপাথরে কি ভবিষ্যৎ বদলানো সম্ভব?

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের সাথে পাথরের একটা নিবিড় সম্পর্ক হয়েছে। সেটা শুরু হয়েছিল পাথুরে হাতিয়ার থেকে, আগুনের আবিষ্কার, চাকার আবিষ্কার, পাথর ব্যবহার করে ঘর তৈরি করা হয়ে শেষ পর্যন্ত পাথরের প্রতি একটা অযাচিত শ্রদ্ধাতে গিয়ে থেমেছে। বলছিলাম মানুষের হীরা-রুবির প্রতি আকর্ষণের কথা।

মানুষ সবসময়ই ভিন্নতার প্রতি আকৃষ্ট হয়। বিবর্তনের দিক থেকে এটার হয়তো একটা ভালো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতে পারে, কিন্তু সেটা পরের ব্যাপার। ভিন্নতার উদাহরণ হিসেবে হীরার ব্যাপারটি লক্ষ্য করুন। হীরা হচ্ছে কার্বনের একটা রূপমাত্র, গ্রাফাইট বা পেন্সিলের শীষের চেয়ে খুব ভিন্ন একটা কিছু না। কখনো কাউকে দেখেছেন বলতে- “ভাবী আপনার ভাইয়া আমার জন্য গ্রাফাইটের আংটি কিনেছে”? বা কোনো জুয়েলার্সের বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনে দেখেছেন গ্রাফাইটের গয়নার কথা? ভাবুন তো পেন্সিলের দাম কতো আর হীরার দাম কতো? এর কারণ হচ্ছে হীরা দুর্লভ একটি বস্তু! তবে রসায়নের দৃষ্টিতে, আপাতভাবে হীরা আর গ্রাফাইটের কোনো পার্থক্য নেই, তাদের গঠনের পার্থক্য ছাড়া।

31.jpg

আমাদের কাছে হীরা আর গ্রাফাইটের পার্থক্য হচ্ছে চাকচিক্য আর আর সৌন্দর্য্য। এই সৌন্দর্য্যের কারণের হীরার দাম এতো বেশি। একই রকমভাবে রাশিচক্রে ব্যবহৃত রত্নপাথর সাধারণ পাথরের চেয়ে খুব একটা ভিন্ন না, এরা কার্বন বা সিলিকনের তৈরি। এদের বিশেষত্ব হচ্ছে এরা দুর্লভ, দীর্ঘস্থায়ী আর সুন্দর।

এই রত্নপাথর কোত্থেকে আসে

হীরার মতোই এই রত্নপাথরগুলো আসে পৃথিবী পৃষ্ঠের নিচ থেকে। যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি- পৃথিবীর কেন্দ্রে রয়েছে গলিত লৌহের একটা গোলক আর তার উপরে অনেকগুলো স্তর আছে যার সর্বশেষ (সবচেয়ে ওপরের) স্তরের ওপরে আমরা বাস করি। আলোচ্য বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পৃথিবীর স্তরগুলোর ব্যাপারে কথা বলা যায়। পৃথিবী পৃষ্ঠের স্তর মূলত চারটি-  Crust বা খোসা, Upper Mantle বা ঊর্ধ্ব-আবরণ, Lower Mantle বা নিম্ন-আবরণ, Outer Core বা বহিঃকেন্দ্র, Inner Core বা অন্তঃকেন্দ্র।

30.jpg

ক্রাস্ট বা খোসা হচ্ছে সেই স্তর যেটার ওপরে আমরা বসবাস করছি। গোটা আপেলের তুলনায় খোসা যেমন পাতলা, গোটা পৃথিবীর তুলনায় ক্রাস্ট-ও তাই। ক্রাস্টের ব্যাপ্তি হচ্ছে ৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার। এই এলাকার মাঝেই অনেক রত্নপাথর তৈরি হয়।

ভূগর্ভস্থ পানিতে ভূগর্ভস্থ খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত হয়ে থাকে। দ্রবীভূত হয়ে থাকা নির্ভর করে দ্রবণের বাহ্যিক অবস্থার উপর। দ্রবণের বাহ্যিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে দ্রবীভূত খনিজ(যেমন দ্রবণের তাপমাত্রা বাড়া বা কমা) থিতিয়ে পরে। এর একটা পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত হওয়ায় লবণের স্ফটিক তৈরি হওয়া।

29.jpg

ভূগর্ভস্থ পানি কী ধরণের খনিজ দ্রবীভূত করছে সেটার ওপরে ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় – কী ধরনের রত্মপাথর তৈরি হবে। যেমনঃ যদি সিলিকাযুক্ত (SiO2) খনিজ দ্রবীভূত হয়, তবে সিলিকাযুক্ত রত্মপাথর নীলা, আকীক, আর উপল রত্ন পাওয়া যাবে। যদি কপারযুক্ত খনিজের সাথে বিক্রিয়া করে তবে কপারযুক্ত রত্নপাথর তৈরি হবে। যেমনঃ ম্যালাকাইট, আজ্যুরাইট, আর ফিরোজা পাথর।

হাইড্রোথার্মাল ডিপোজিটের (পানি-তাপীয় সঞ্চয়ের) রত্নগুলোও ভূগর্ভস্থ পানিতে গঠিত হওয়া রত্নের মতো। মাটিতে চুঁইয়ে প্রবেশ করা বৃষ্টির পানি আর/অথবা ঠাণ্ডা হতে থাকা ম্যাগমা থেকে আসা পানিতে ভূগর্ভস্থ পানির মতো করে খনিজ মিশে দ্রবণ সৃষ্টি হয়। সে দ্রবণগুলো এই কঠিন স্তরে থাকা ফাটলগুলোতে জমা হয়। এবং সেখানে পান্না (বেরিলিয়ামের খনিজ থেকে) আর  tourmaline (বোরন খনিজ থেকে) গঠিত হয়। এই খনিজগুলো মূলত আসে ঠাণ্ডা হতে থাকা গলিত পাথর বা ম্যাগমা থেকে।

28.jpg

Pegmatites হচ্ছে অস্বাভাবিক ম্যাগমার অংশ। ঠাণ্ডা হতে থাকা মূল ম্যাগমাতে থাকা কম ঘনত্বের পানি অন্য কিছুর সাথে না মিশে ধীরে ধীরে এক স্থানে ঘনত্ব (উত্তপ্ত হয়ে) বাড়াতে থাকে। ফলে শেষ পাথরের খণ্ডটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়, একই ভাবে অন্যান্য খনিজ যা সহজে অন্যকিছুর সাথে মিশে না, সেগুলোও এখানে জমা হতে থাকে। যখন এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপে পানিপূর্ণ (সিলিকা আর অন্যান্য অস্বাভাবিক খনিজগুলোও) ম্যাগমা স্ফটিকাকার ধারণ করতে থাকে সেটা Pegmatites গঠন করে। এই ম্যাগমাতে পানি বেশি থাকার কারণে এদের স্ফটিকের আকার খুব জলদি বাড়তে থাকে, তাই Pegmatites স্ফটিকরা আকারে বড় হয়ে থাকে।

এই  Pegmatites এ বেরিলিয়াম খনিজ বেশি থাকলে পান্না, ফিরোজা সৃষ্টি হয়, বোরন বেশি থাকলে tourmaline বেশী সৃষ্টি হয়। বেরিলিয়াম আর বোরন পাথরে সহজলভ্য না, এই Pegmatites গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা এই দুই মৌলের খনিজ পেয়ে থাকি।

ম্যাগমাটিক রত্ন

কিছু রত্ন ম্যাগমায় আর ম্যাগমায় থাকা গ্যাসের বুদবুদে সৃষ্টি হয়। যেগুলো পরে অগ্ন্যুৎপাতে নিক্ষিপ্ত পাথর থেকে সংগ্রহ করা হয়। যেমনঃ গোমেদ মণি, পোখরাজ, আর চুনী।

27.jpg

রূপান্তরিত রত্ন

রূপান্তরিত রত্ন চাপ-তাপ আর বিক্রিয়ার পরিবর্তিত হওয়া পাথর। রূপান্তর প্রক্রিয়া মূলত দুই ভাবে হয়।

  • প্লেট টেকটনিকসের কারণে চাপ এবং তাপের বৃদ্ধিতে জেড রত্ন সৃষ্টি হতে পারে, খুব কম ক্ষেত্রে হলেও প্লেট টেকটনিকসের রূপান্তর প্রক্রিয়ার চাপ হীরা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
  • ভুতাত্ত্বিক কারণে বড় পাথর মাটি চাপা পড়ে যায় এবং তাপ এবং চাপের সাথে পরিবর্তিত হয়। তামড়ি রত্ন আর cordierite এভাবেই সৃষ্টি হয়।

ম্যান্টলে সৃষ্ট রত্ন

উর্ধ্ব ম্যান্টলে থাকা সবচেয়ে সহজলভ্য খনিজ পদার্থ হচ্ছে অলিভিন [(Mg, Fe)2SiO4] । ম্যান্টলের অংশবিশেষ ভূতাত্ত্বিক আর অগ্লুতপাত জনিত কারণে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে।

  • গভীর ম্যান্টলের রত্ন, kimberlitesপাথররা অগ্ন্যুৎপাতের সাথে উঠে আসে, অনেক সময় তারা এতো গভীর থেকে আসে যে তাদের সাথে হীরা পাওয়া যায়। হীরা কার্বনের একটি রূপ, আর ভূগর্ভে কার্বনের একমাত্র স্থবির উৎস হচ্ছে গ্রাফাইট। উচ্চ চাপ আর তাপে গ্রাফাইট থেকে হীরা হয়। আর তাই সব হীরাই ভূগর্ভের প্রায় ১০০ মাইল নিচে সৃষ্টি হয় আর তাদের বয়স ইঙ্গিত দেয় যে এদের সৃষ্টি পৃথিবীর জন্মের ১ বিলিয়ন বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।

26

খুব কম হীরাই রূপান্তরিত পাথরে পাওয়া যায়, বেশীর ভাগই আসে ম্যান্টল থেকে।

এস্ট্রলজির ভুয়া বিদ্যাতে কোন রত্নের কী ক্ষমতা?

জ্যোতিষশাস্ত্রের ভুয়া বিদ্যার মতে- প্রতিটি গ্রহ একেকটি রত্নের সাথে সম্পর্কিত। সলিউশন এস্ট্রলজির মতে শুক্র গ্রহ যেহেতু সাদা (শুক্র কি সাদা?), সেহেতু এটির সাথে হীরার সম্পর্ক আছে। লাল বা গোলাপি দিয়ে সূর্য (সূর্য কি গ্রহ?) আর হলুদ বা নীল দিয়ে বৃহস্পতি (বৃহস্পতি কি নীল বা হলুদ?)।

তারা মনে করেন – প্রতিটি রত্ন  দিয়েএকেকটি গ্রহ থেকে শক্তি টানা যায়, আর এটা পরিধানকারীর শরীরে তার প্রভাব দৃশ্যমান হয়! এগুলো হাতে, আঙ্গুলে, বা গলায় পড়তে হয়। আবার নির্দিষ্ট গ্রহের “উপকার” পেতে হলে নির্দিষ্ট আঙ্গুলে আংটি পড়তে হয়।

বৃদ্ধাঙ্গুলি- শুক্র

তর্জনী- বৃহস্পতি

মধ্যমা- শনি

অনামিকা- সূর্য

কনিষ্ঠা- বুধ।

প্রশ্ন থেকে গেলো- মঙ্গল, পৃথিবী, নেপচুন, আর ইউরেনাসকে কেন বাদ দেয়া হলো? হাতে পাঁচটা আঙ্গুল বলে? যাদের হাতে ছয়টা আঙ্গুল হয় (যেমন – ভারতীয় অভিনেতা ঋত্বিক রোশন) তাদের পক্ষে কি অন্য গ্রহের প্রভাব আনা সম্ভব? সূর্যকে কেনো গ্রহের সাথে বিবেচনা করা হলো?

আবার ধরুন আপনার রাশির ক্ষেত্রে সুর্যের প্রভাব আপনার উপর কম (সূর্যের প্রভাব বলতে যদি অতিবেগুনী রশ্মি বোঝায় তাহলে কিন্তু এটা আশীর্বাদ), সেক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট আঙ্গুলে নির্দিষ্ট আংটি পড়ে নিলেই সূর্য আপনার উপর তার দয়া বর্ষণ করবে (যেন সূর্য তাকিয়ে আছে, কে আংটি পড়বে আর সে দয়া বর্ষণ শুরু করবে। আরেকটা প্রশ্ন, রাতের বেলা কী হবে, সূর্য না থাকলে?)

ওয়েবসাইটটি বলছে- যেভাবে শাকসবজি খেকে ভিটামিন এ আর আয়রন পাওয়া যা, বা সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে, তেমনি আংটি গ্রহ থেকে শক্তি আহরণ করতে সাহায্য করে! এবার আসুন দেখি গ্রহের বলের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী হতে পারে। বিজ্ঞান সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলেও আমরা বুঝতে পারি, আসলে কোনো যুক্তিই নাই। তবে একটু মজা করি।

চিরায়ত পদার্থবিদ্যাতে, বল চার প্রকার-

১) মহাকর্ষ বল

২) তাড়িৎচৌম্বক বল

৩ এবং ৪) নিউক্লীয় বল, সবল এবং দুর্বল, যেগুলো কাজ করে থাকে অণু বা পরমাণু লেভেলে। সুতরাং, জ্যোতিষশাস্ত্রের দাবিকৃত গ্রহের “বলের” জন্য আমাদের দুইটি প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া গেলো, মহাকর্ষ আর তাড়িৎচৌম্বক বল।

আমরা জানি মহাকর্ষ কী আর কীভাবে কাজ করে, আলবার্ট আইনস্টাইন আর স্যার আইজ্যাক নিউটনের বদৌলতে। মহাকর্ষ মূলত নির্ভর করে দুটি ব্যাপারের উপর- বস্তুর দূরত্ব আর ভর। বস্তু যত বড় তার মহাকর্ষ ততো বেশি। বস্তু যত কাছে, তার মহাকর্ষ অন্যদের তত বেশি প্রভাবিত করবে। দূরত্ব বেশি হওয়ায় বড় গ্রহ বৃহস্পতির চেয়ে আমাদের চাঁদের মহাকর্ষ বেশি। এমন কি সৌরজগতের যে কোনো বস্তুর চেয়ে চাঁদের প্রভাব আমাদের ওপর বেশি হবে। উপরে আমরা দেখে এসেছি জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে কোন কোন বস্তুর প্রভাব পড়তে পারে আমাদের উপর, আর সেখানে চাঁদের কথা বলা নাই! সুতরাং, বলা যায় গ্রহের যে “বলের” কথা বলা হচ্ছে, সেটা মহাকর্ষ না!

তাহলে কি তাড়িৎচৌম্বক বল? আসুন দেখি। তাড়িৎচৌম্বক বলও মহাকর্ষের মতো দূরত্বের উপর নির্ভরশীল, আর ভরের জায়গায় শুধু বিদ্যুতের আধান বা চার্জ হিসাব করতে হয়। বিদ্যুতের আধান জিনিসটা আয়নিত কণার (ইলেকট্রন এবং প্রোটন) উপস্থিতির উপর নির্ভর করে, আর বিপরীতধর্মী কণা একে অপরকে আকর্ষণ করে, তাই এদের খুব কম ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। আর সেজন্য গ্রহরা বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ হয়ে থাকে।

তবে অন্যান্য কারণে কিছু গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্র থাকে, তবে সেটা গ্রহের চেয়ে খুব বেশী দূরে বিস্তৃত না। বৃহস্পতির একটা বিশাল চৌম্বকক্ষেত্র আছে, কিন্তু জুপিটার এতোই দূরে যে সেটা আমাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। আবার সূর্যের বিশাল বড় একটা চৌম্বকক্ষেত্র আছে। আর সূর্য আমাদের সৌরজগতের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস। সূর্যের পৃষ্ঠে হওয়া যে কোনো বিস্ফোরণ আমাদের দিকে আয়নিত কণার বহর পাঠায়, যার প্রমাণ হচ্ছে ১৯৮৯ সালের মার্চের ১৩ তারিখে হওয়া ব্ল্যাক আউট। যাই হোক, যদি সৌরজগতের কোনো বস্তুর আমাদের উপর প্রভাব ফেলার ক্ষমতা থেকেই থাকে, তবে সেটা হচ্ছে সূর্য (তাড়িৎচৌম্বক) বা চাঁদ (মহাকর্ষ), তবে জ্যোতিষরা সাধারণত গ্রহদেরকে এই প্রভাবের সমান ভাগ দিতে চান।

আমরা জানি সকল বলই দূরত্বে সাথে হ্রাস পায়, কিন্তু তারা বলেন, দূরত্ব কোনো ব্যাপারই না। আবার ভরও কোনো ব্যাপার না, তা না হলে তারা সূর্য আর বৃহস্পতিকে বেশি ভক্তি করতেন, কিন্তু তাদের মতে “সবাই সমান”।

আবার ধারণা করা হয়, জানা মহাবিশ্বে গ্রহের সংখ্যা ৫৬ ট্রিলিয়ন, তাদের প্রভাবকে রাশিচক্রে কীভাবে জায়গা দিবেন জ্যোতিষরা? ৫৬ ট্রিলিয়নের প্রভাবের জন্য কত আংটি পড়তে হবে? অথবা আমাদের সৌরজগতের Asteroid belt বা গ্রহাণুর বলয়কে কে যদি হিসেব করি? ধারণা করা হয় গ্রহাণুর বলয়ে বিলিয়নের কাছাকাছি গ্রহাণু আছে, যারা ১০০ মিটারের চেয়ে বড়।  বলতে পারেন, এগুলো আমরা দেখি না বা এরা অনেক ছোট, তাই এদের প্রভাব নাই।

25.png

আরে খাড়ান! সূর্য আর বৃহস্পতি যদি একই মাপের প্রভাব ফেলে সেক্ষেত্রে দূরত্ব বা আকার কোনো ব্যাপার না। একই ভাবে, গ্রহের দূরত্বের জন্য বা তাদের আকারের জন্য যদি আমরা গ্রহ নাও দেখতে পাই, তাদের প্রভাব কাজ করবেই।

তাহলে আমাদের জানা কোনো বল এখানে ক্রিয়াশীল না, আবার অজানা কোনো বল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ পদার্থবিদ্যার আইনের বাইরের কোনো বল থাকলে আমাদের সৌরজগতের অস্তিত্ব টিকে থাকার কথা না। সুতরাং, জানা বা অজানা কোনো বল এখানে কাজ করছে না, এখানে মানুষের অসহায়ত্ব আর বোকামি ছাড়া কোনো কিছু শক্তিশালী না।

জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস করলে সমস্যা কী?

২০১০ সালের এক রিপোর্টে দেখা যায়- ইটালিয়ানরা প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন ইউরো খরচ করে এস্ট্রলজি খাতে। আমাদের দেশে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জনপ্রিয় অপরাধভিত্তিক অনুষ্ঠান তালাশের ৯০তম পর্ব ‘জ্যোতিষরাজ, গুরুমা, কামাক্ষাগুরু’ তে দেখানো হয়, বাংলাদেশে এসব ভুয়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কত ভয়ংকর!

জ্যোতিষশাস্ত্র মানুষকে শেখায় যে মানুষের জীবনের নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে নেই। এই চিন্তাটা অসহায়ত্ব, পরনির্ভরশীলতার জন্ম দেয়। আবার এই অসহায়ত্ব আর পরনির্ভরশীলতা থেকে মানুষ জ্যোতিষশাস্ত্রের দিকে আকৃষ্ট হয়। কী সুন্দর চক্র! এবার বলি আসলে কী সমস্যা-

24.jpg

আমাদের দেশের সাবেক বর্তমান রাজনীতিবিদ আর ধর্মীয় নেতারা জ্যোতিষশাস্ত্রতে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করেন অলৌকিক ক্ষমতা বা শক্তিতে, তারা মনে করেন না যে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আছেন। তারা মনে করেন নির্জীব গ্রহ তাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে। আমরা কি চাইবো এমন মানুষের হাতে নিজেদের সকল কিছুর দায়িত্ব ছেড়ে দিতে? এমন নেতাদের কি আমাদের বিশ্বাস করা উচিত?

– স্যাগানিস্ট

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.